অনিশ্চিত গন্তব্যে পদ্মা সেতু দুর্নীতি মামলা

জেসমিন মলি | তারিখ: ১৬-০২-২০১৪
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। এরপর এক বছরের বেশি সময় চলে গেলেও তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এসএনসি-লাভালিন কর্মকর্তা (সাবেক) রমেশ শাহর ডায়েরিতেই আটকে আছে তদন্ত। ডায়েরি না পেলে মামলার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মানছেন খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারাও। পাশাপাশি ডায়েরিটি হাতে পাওয়ার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ, সে কথাও বলছেন তারা।

2_32280দুদকের তদন্ত দল সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ তদন্ত কর্মকর্তারা হাতে পেয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণের জন্য তা যথেষ্ট নয়। ঘুষ লেনদেন-সংক্রান্ত যেসব প্রমাণ রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ সে দেশের আদালতে উপস্থাপন করেছে, তা সংগ্রহের ওপরই নির্ভর করছে মামলার ভবিষ্যৎ। কিন্তু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন হওয়ায় কানাডা থেকে এখন পর্যন্ত এসব তথ্য পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা মেলেনি। দুই দফা চেষ্টা করেও কানাডা থেকে রমেশের ডায়েরির অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারেনি কমিশন। রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইলে, তা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে থেমে আছে মামলার তদন্ত কার্যক্রম।
দুদকের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল-জাহিদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল আলোচিত এ মামলা তদন্ত করছে। এক বছর এক মাস ধরে এ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তদন্ত দলের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে বণিক বার্তাকে বলেন, মামলার তদন্তকাজ বর্তমানে বন্ধ। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথি না পেলে তদন্তে অগ্রসর হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অভিযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত জোরালো কোনো প্রমাণও সংগ্রহ করা যায়নি।
দুদক সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরীর দাবি, কানাডার আদালতে বিচারকাজ চলার সঙ্গে দুদকের তদন্তের কোনো সম্পর্ক নেই। তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের মতো করে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কবে নাগাদ তা শেষ হবে, এখনই বলা যাচ্ছে না।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করে দুদক। এতে আসামি করা হয় সাতজনকে। তারা হলেন— সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি ইপিসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা এবং এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস, রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইল। এজাহারভুক্ত আসামি না হলেও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে সন্দেহভাজনের তালিকায় রাখা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার হন মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও কাজী ফেরদৌস। ৫ ফেব্রুয়ারি তারা জামিনে মুক্তি পান। ২০১৩ সালের মার্চে গ্রেফতার হয়ে জুনে জামিন পান মো. রিয়াজ আহমেদ।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ এক বিবৃতিতে পরামর্শকের কাজ পেতে ঘুষ সাধার অভিযোগে আবুল হাসান চৌধুুরী, জুলফিকার আলী ও কেভিন ওয়ালেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথা জানায়।
দুদকের তথ্যমতে, জুলফিকার আলী কানাডিয়ান নাগরিক হলেও তিনি কুমিল্লার চান্দিনার অধিবাসী। টরন্টোয় তার ওসার্ভ কানাডা নামে গার্মেন্ট ব্যবসা আছে। বাংলাদেশেও            ইউরেনাস অ্যাপারেলস (প্রা.) লিমিটেড নামে তার একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। কারখানাটি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যও।

 

1 Comment

Leave a Reply to asreza-blog Cancel