ইভিএম ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না করতে দুদককে নির্বাচন কমিশনের চিঠি

জেসমিন মলি
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল, ২০১৪
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয় প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না করার অনুরোধ জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ চিঠি পাঠানো হয় বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
দুদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ইভিএম প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তা নির্বাচন কমিশন গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখবে। কেননা বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইভিএম করে নির্বাচন কমিশন। তিন দফায় মোট ১ হাজার ২৩০টি ইভিএম কেনা হয়। প্রথম দফায় ১৩০টি ইভিএম কেনা হয় প্রতিটি ১০ হাজার ৮০০ টাকা দরে। দ্বিতীয় দফায় ৪০০টি ইভিএম কেনা হয় প্রতিটি প্রায় ৩২ হাজার টাকায়। তৃতীয় দফায় ৭০০ ইভিএম কেনা হয়েছে প্রতিটি ৪৬ হাজার ৫০১ টাকায়। অর্থাত্ তৃতীয় দফায় কেনা প্রতিটি ইভিএমের দাম প্রথম দফার তুলনায় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা বেশি পড়েছে, যাতে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ আসে দুদকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, ইভিএম ক্রয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার মতো দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি দুদক নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে ইভিএম ক্রয়সংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, সরবরাহের প্রমাণপত্র, বিল-ভাউচারসহ যাবতীয় রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বলে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন দুদককে সেসব রেকর্ডপত্র না পাঠিয়ে উল্টো তদন্ত বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠায়।
দুদকের সচিব বরাবর পাঠানো এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, প্রথম পর্যায়ে ১৩০টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০০টি ইভিএম সরাসরি নিজস্ব তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবন, প্রস্তুত ও সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। তবে তৃতীয় পর্যায়ের ৭০০টি ইভিএম বুয়েটের সহযোগিতায় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড তৈরি ও সরবরাহ করে। এ দুই প্রতিষ্ঠানই দেশের স্বনামধন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান। এসব ইভিএমের সাহায্যে এরই মধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুদককে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে নির্বাচন কমিশনের উপসচিব সাজাহান খান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়টি নিষ্পতির জন্য দুদকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে এ তদন্তের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম নির্বাচন কমিশনের পাঠানো চিঠি দুদকের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন বিভাগে আইনি মতামতের জন্য পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে দুদকের লিগ্যাল ও প্রসিকিউশন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান আইন ও সংবিধান অনুযায়ী চলমান কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তকাজ বন্ধের সুপারিশ বা অনুরোধ করার সুযোগ নেই। এ চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন দুদকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বপ্রথম ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। চট্টগ্রামের জামালখান ওয়ার্ডে পাইলট প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম ইভিএম ব্যবহার চালু করেন তত্কালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা।

দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত

Leave a Reply