১৪১ আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ, অর্জন শূন্য
জেসমিন মলি | ২০১৫-১১-২৩ ইং
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৫ দেশের ১৪১টি আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এতে গত পাঁচ বছরে খরচ হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু ফলাফল শূন্য। উদ্যোক্তাদের স্বস্তি দিতে পারে, এমন কোনো বড় রফতানি আদেশ মেলেনি এসব মেলা থেকে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আয়োজিত এ ধরনের মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য পরিচিতির পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুযোগ বাড়ে বলে ইপিবির পক্ষ থেকে জোর দিয়ে বলা হলেও বাস্তবে তেমনটি ঘটছে না। রফতানির বিভিন্ন তথ্যেই উঠে আসছে তা। ইপিবিও এসব মেলায় অংশ নিয়ে বড় বাণিজ্যের সুযোগ হয়েছে, এমনটি দেখাতে পারছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্যোক্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যবসার যেটুকু বিস্তৃতি, তা উদ্যোক্তাদের নিজস্ব যোগাযোগেই হয়েছে। এসব মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের পণ্যের বিস্তৃতি সেভাবে বাড়েনি। ইপিবির অদক্ষতার কারণে বিদেশে অনুষ্ঠিত এসব মেলায় ত্রুটি নিয়েই উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ করতে হয়। পণ্য দেরিতে পৌঁছানো ছাড়াও স্টল-প্যাভিলিয়ন তৈরিতে থেকে যায় দীনতার ছাপ। এছাড়া মেলায় অংশগ্রহণের জন্য এমন সব উদ্যোক্তাকে বাছাই করা হয়, যাদের পণ্য সেভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। আবার কোনো বাছবিচার না করেই সব দেশের সব ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করা হয়েছে। এসব কারণে বিদেশে অনুষ্ঠিত মেলায় অংশ নিয়েও রফতানি চিত্রে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসেনি।
ইপিবির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রচলিত, অপ্রচলিত, সম্ভাবনাময় সব ধরনের বাজারের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো থেকে রফতানি আয় কমেছে। এর মধ্যে আছে ইউরোপের প্রচলিত বাজারের জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে রয়েছে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও হংকং। আর মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক, সৌদি আরব ও জর্ডান।
এদিকে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ ও রফতানি পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিদেশে অনুষ্ঠিত মেলায় অংশগ্রহণ কমিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছে। কমিটি সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ কমিয়ে আকর্ষণীয় পণ্য সমাহার দৃষ্টিনন্দন ও জাঁকজমক করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে আয়োজিত এসব মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরো কী ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসা যায়, তা পর্যালোচনার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে।
বৈঠকে সিঙ্গেল কান্ট্রির আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তেমন ফলাফল আসে না উল্লেখ করে এ ধরনের মেলায় অংশগ্রহণের বিষয়ে ইপিবিকে নিরুৎসাহিত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে যেসব বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, পর্যাপ্ত পরিমাণের পণ্য ক্রয়ে সাড়া মেলে এবং বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হয়, শুধু সেসব গুরুত্বপূর্ণ দেশে বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের জন্য বলেন তিনি।
জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে যেকোনো মেলায় অংশ নিতে একটি প্যাভিলিয়নের খরচ পড়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু সরকার সারা বছরের জন্য এ খাতে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে ১৮ কোটি টাকা। তবে চীনসহ এশিয়া অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ করলে খরচ কম পড়ে।
আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণের ফলাফল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, যেকোনো প্রদর্শনীতে অংশ নিলে তার ফলাফল হঠাৎ করেই পাওয়া যায় না। তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রয়াদেশ আসার ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও বাস্তবে তা পেতে সময় দিতে হয়। বাংলাদেশ যে পরিমাণ রফতানি আয় করে, সে পরিমাণের বিচারে প্রদর্শনীতে আমাদের অংশগ্রহণ বা উপস্থিতি কাঙ্ক্ষিত মানের হয় না।
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নিতে গেলেও উপস্থিতির মানও আন্তর্জাতিক মানের হতে হয়। তবে আমরা সেক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। এদিক থেকে আমাদের চেয়ে কম আয় করে, কিন্তু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মান অনেক ভালো, এমন দেশের মধ্যে আছে ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান। পরিস্থিতি উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিগগিরই পরিবর্তন আসবে।
ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, বিদেশে আয়োজিত কোন কোন মেলায় বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে, তা ইপিবির বোর্ড সভায় অনুমোদন নেয়া হয়। এসব মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা স্টল ভাড়া ব্যয়ের একটি অংশ ইপিবিতে জমা দিয়ে থাকেন। ইপিবি থেকে এসব মেলায় হ্যান্ডিক্রাফট অ্যান্ড হ্যান্ডলুম, ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার, আইসিটি প্রডাক্টস, হোম টেক্সটাইল, নিট অ্যান্ড ওভেন, ফার্মাসিউটিক্যালস, সি ফুড, ফুড আইটেম, ফার্নিচার, শিপ বিল্ডিংসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তাব করা হয়।
সংস্থাটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব মেলায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানিতে উৎসাহব্যঞ্জক রফতানি আদেশ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যেসব মেলায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পাওয়া গেছে, সেগুলো বোর্ডে অনুমোদন হলে এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেলে গুরুত্বপূর্ণ মেলায় অংশগ্রহণ করা হবে। এসব মেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার পাশাপাশি সম্ভাবনাময় রফতানি পণ্যের বাজার ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সৃষ্টিই মূল উদ্দেশ্য। এছাড়া অপ্রচলিত পণ্যের উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণের কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে ।
Leave a Reply