বিক্রি হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসির পুরনো ২৩ জাহাজ
জেসমিন মলি | ২০১৫-১২-১৩ ইং
পুরনো, অকেজো ও অলাভজনক জলযান বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। এর পাশাপাশি সচল কিন্তু পুরনো যেসব জাহাজের পরিচালন ব্যয় বেশি, সেগুলোও বিক্রি করা হবে। এজন্য সংস্থাটির ২৩টি জলযান চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি জাহাজ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকিগুলোও প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পরিচালন ব্যয় কমাতে অচল জাহাজের পাশাপাশি সচল পুরনো জাহাজ, যেগুলোয় খরচ বেশি, সেগুলো বিক্রি করে দেয়ার সুপারিশ করে। সে সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই এসব জলযান বিক্রির কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিক্রির লক্ষ্যে যে ২৩টি জলযানের তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে— হিজলা, তিতাস, আত্রাই, রামু, সাঙ্গু, তুরাগ, বিবি-১১২৩, বিবি-১১২৪, বিবি-১১২৬, বিবি-১১৩০, বিবি-১১২২, অন্নতরী-১ থেকে অন্নতরী-৮ পর্যন্ত এবং অন্নতরী-১০, এসটি মিতালী, এসটি খিজির-৬ ও এমভি-সেলা। এসব জলযানের মধ্যে আটটি বিক্রি করে দেয়ার জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেগুলো হলো— তিতাস, তুরাগ, আত্রাই, বিবি-১১২৬ ও অন্নতরী-১ থেকে অন্নতরী-৪ পর্যন্ত। অবশিষ্ট ১৫টি জলযান পর্যায়ক্রমে বিক্রির কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব জলযানের বেশির ভাগেরই অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। এগুলোর কোনোটির বয়স ৫০ পেরিয়েছে, আবার কোনোটি ৮০ বছরের পুরনো। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জলযানে পরিচালন ব্যয় বেশি। এর বাইরেও যাত্রাপথে মাঝে মধ্যে জাহাজগুলো যাত্রীসহ বিকল হয়ে পড়ে। এতে যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা, আবার এগুলো সচল রাখতেও প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে পরিচালন ব্যয় কমাতে এসব জলযান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিআইডব্লিউটিসির অচল জাহাজের পাশাপাশি সচল পুরনো জাহাজ, যেগুলোয় খরচ বেশি, সেগুলো বিক্রির সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে অচল জাহাজগুলো বিক্রির বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় প্রতিবছরই এসব জলযান মেরামত করতে বিআইডব্লিউটিসির বড় অংকের অর্থও ব্যয় করতে হয়। ২০০৯-১০ থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ছোট বড় ২১ টি জলযান মেরামতে সংস্থাটির খরচ হয়েছে ১২ কোটি ২৬ লাখ ছয় হাজার ৭৯৬ টাকা। এর মধ্যে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৮ হাজার ৯৭০ টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬০ টাকা ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২ কোটি ৯১ লাখ ৮৬৬ টাকা ব্যয় হয়। এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া না গেলেও প্রতি বছর এ ব্যয় বাড়ছে বলে জানা গেছে।
২৩টি জলযানের বাইরেও অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে পরিচালনার জন্য বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির সাতটি অভ্যন্তরীণ ও তিনটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী জলযান রয়েছে। ঢাকা-বরিশাল-খুলনা অভ্যন্তরীণ রুটে বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত যাত্রীবাহী জাহাজ ও প্যাডেল স্টিমারগুলো প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে অধিক যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত নতুন যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, এরই মধ্যে সংস্থার সম্পূর্ণ অর্থায়নে ২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে যাত্রীবাহী জাহাজ এমভি বাঙালি ও ২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় এমভি মধুমতি নির্মাণ করা হয়েছে। এসব জাহাজ ২০১৪ সালের এপ্রিল ও ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বহরে নিয়োজিত হয়। বাঙালি জাহাজটি আরো আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সংস্কারের কাজ চলছে বলে সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীবাহী জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৮০ শতাংশ জিওবি ও ২০ শতাংশ বিআইডব্লিউটিসির অর্থায়নে ৭২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় আরো দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ প্রকল্প চলতি বছরের এপ্রিলে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। জাহাজ দুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামীকাল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল রুটে পরিচালনার জন্য ৭৫ শতাংশ জিওবি ও ২৫ শতাংশ বিআইডব্লিউটিসির অর্থায়নে ৫১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় ৫০০ ও ৭০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জাহাজ নির্মাণের একটি প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। জাহাজ দুটি নির্মাণের জন্য গৃহীত দরপত্রের মূল্যায়ন শেষ হয়েছে।
এছাড়া সম্প্রতি প্রায় ১ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত বিআইডব্লিউটিসির জন্য ৩৫টি বাণিজ্যিক ও আটটি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং দুটি নতুন স্লিপওয়ে নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদনের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply