ছয় সমবায় প্রতিষ্ঠানের অবৈধ ‘ব্যাংকিং’ মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা চেয়েছে সমবায় অধিদফতর

 

জেসমিন মলি | ২০১৫-১২-০৪ ইং সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধন নিয়ে অবৈধভাবে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করছে ছয় প্রতিষ্ঠান। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে জানিয়েছে সমবায় অধিদফতর। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে তারা।

অভিযুক্ত এ সমবায় সমিতিগুলো হচ্ছে— দ্য ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ব্যাংক) লিমিটেড, দ্য ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, আদর্শ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড, স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড ও আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফিন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড (সাবেক এসিসিএফ ব্যাংক লিমিটেড)।

সমবায় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যেকটিই সমবায় সমিতি হিসেবে নিবন্ধিত। পরবর্তীতে তারা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ‘ব্যাংক’ শব্দটির অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। এ অবস্থায় সমিতিগুলোকে নামের ‘ব্যাংক’ শব্দটি সংশোধন করে সমবায় অধিদফতরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালকের কার্যালয়কে তা অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নির্দেশনা সত্ত্বেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সমিতিগুলো। তাই বিষয়টি সমবায় অধিদফতর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়।

এদিকে গত ২৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যেসব সমবায় সমিতি বেআইনিভাবে তাদের নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কেউ ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করতে পারে না। যদি কেউ তা করে, তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ-সংক্রান্ত অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ারভুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, সমবায় সমিতি নিবন্ধন নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা অনিয়ম, প্রতারণা ও দুর্নীতির এক ধরনের অভিনব ও সহজ উপায়। বাংলাদেশে এরই মধ্যে সমবায় সমিতির নাম নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসার ঝুঁকিগুলো পরিষ্কারভাবেই উন্মোচন হয়েছে। প্রতিনিয়তই বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে সরকারের উচিত আইনের কঠোর প্রয়োগ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনস্বার্থে অনিয়ম ও প্রতারণা প্রতিরোধের ওপর জোর দেয়া।

সমবায় অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত দেশে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৬২টি সমবায় সমিতির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক  সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫১২, কেন্দ্রীয় সমিতির সংখ্যা ১ হাজার ১২৮ ও জাতীয় সমিতি ২২টি। এসব সমিতির সদস্য সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮১। সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিয়ে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সারা দেশে অফিস খুলে সদস্য সংগ্রহের নামে অবৈধ ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। আইন লঙ্ঘন করে সমিতিগুলো অবৈধ ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকায় প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এর আগে টিআইবির এক গবেষণায় বলা হয়, ২০১৩ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের ২১টি বহুমুখী এবং সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতি নয় লাখ সদস্য ও গ্রাহকের ৯ হাজার ৭০ কোটি টাকা আত্মসাত্ করেছে। সমবায় খাতের এ ব্যর্থতার মূলে রয়েছে সমবায় সমিতির নিবন্ধন, পর্যবেক্ষণ, তদারকি, পরিচর্যা, নিরীক্ষা, প্রণোদনা এবং উত্সাহ প্রদানে নিয়ন্ত্রক ও তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোগত দুর্বলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি।

Leave a Reply