প্রকল্প শেষ হলেও ২৩ গাড়ি জমা দেয়নি পরিবেশ অধিদফতর
তাসনিম মহসিন ও জেসমিন মলি | ২০১৬-০১-১৮ ইং
রাজধানীর পরিবেশের মান উন্নয়ন, দূষণ নিরূপণ ও পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে নেয়া হয় ঢাকা শহরের পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে পরিবেশ অধিদফতরকে সে সময় দেয়া হয় মোট চারটি গাড়ি। ১৯৯৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও গাড়িগুলো এখনো জমা দেয়নি অধিদফতর।
একইভাবে ২০০১ সালে বাতাসের মান উন্নয়নে এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প (একিউএমপি) হাতে নেয় পরিবেশ অধিদফতর, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৮ সালের ৩০ জুন। প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদফতরকে দেয়া হয় ১০টি গাড়ি। এর মধ্যে সাতটি গাড়ি অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর হলেও অবশিষ্ট তিনটি গাড়ি অধিদফতরের ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ব্যবহার করছে।
জানা গেছে, এসব প্রকল্পসহ পরিবেশ অধিদফতরের চারটি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে আগেই। এ প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ করা ২৩টি গাড়ি জমা না দিয়ে প্রাধিকারবহির্ভূতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কখনো আবার অন্য প্রকল্প শুরু হলে সেখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে এসব গাড়ি।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মাথায় সব গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুলে জমা দিতে হয়। পরবর্তীতে নতুন কোনো প্রকল্প নেয়া হলে তার চাহিদাও সেখানেই দিতে হয়। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের ওইসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি।
বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, সব মন্ত্রণালয়েই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটি দুঃখজনক ব্যাপার। মূলত মন্ত্রণালয়গুলোয় পর্যাপ্ত গাড়ি না থাকার কারণেই এমনটি হচ্ছে। এগুলো নিয়ে শুধু আলোচনাই হয়। কোনো সমাধান হয় না। আমাদের মন্ত্রণালয়েও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রয়েছে। প্রকল্প শেষ হলে গাড়ি ফেরত নেয়ার দায়িত্ব তাদেরই।
জানা গেছে, ঢাকা শহরের পরিবেশগত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য পরিবেশ অধিদফতরকে দেয়া হয় তিনটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস। ১৯৯৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্প শেষ হলেও ২০ বছর ধরে গাড়িগুলো নিজেদের জিম্মায় রেখেছে পরিবেশ অধিদফতর। বর্তমানে গাড়িগুলো চলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তা নিলামে তুলে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। তবে গাড়ি বিক্রির টাকা পরিবেশ অধিদফতর পাবে, নাকি মন্ত্রণালয় পাবে, নাকি পরিবহন পুলের হিসাবে জমা দেয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা আছে, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৬০ দিন) প্রকল্পের যানবাহন পরিবহন পুলে জমা না দিলে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে অন্য কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, গাড়ির সংকট রয়েছে সত্য। আবার পরিবহন পুলের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি জমাও দিতে হয়। তবে এ দায় শুধু পরিবেশ অধিদফতরের ঘাড়ে চাপালেই হবে না। মন্ত্রণালয়ও এজন্য দায়ী। কারণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই অধিদফতর কাজ করে থাকে। আর গাড়ি শুধু অধিদফতরের কর্মকর্তারাই ব্যবহার করেন না। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিভিন্ন সময় ব্যবহার করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এটি চলে আসছে।
জানা গেছে, ২০০২ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০১১ সালের জুনে শেষ হয় কোস্টাল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ড বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প। এ প্রকল্পে তিনটি জিপ, একটি প্রাইভেট কার ও ছয়টি মোটরসাইকেল দেয়া হয়। এ প্রকল্পের যানবাহনও অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর হয়েছে। আর ২০০৬ সালে শুরু হয়ে ২০১০ সালে শেষ হয় বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং প্রকল্প। প্রকল্প শেষে তিনটি জিপ ও দুটি মাইক্রোবাস পরিবেশ অধিদফতর নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।
Leave a Reply