অব্যবহৃত থাকছে উন্নয়ন সহায়তার এক-তৃতীয়াংশ
মীর মনিরুজ্জামান ও জেসমিন মলি | ২০১৫-১১-১৬ ইং
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত (১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর) উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ৯ হাজার ১৪৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণ ও সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিশ্রুত অর্থসহায়তার মধ্যে ছাড় হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলার। বাকি ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাওয়া যায়নি। সে হিসাবে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ব্যবহার করতে পারেনি বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদে ১২ নভেম্বর এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিশ্রুত ঋণের মধ্যে অনুদান হিসেবে ছিল ২ হাজার ৯৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার আর ঋণ হিসেবে ছিল ৬ হাজার ১৮২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে অনুদান হিসেবে ছাড় হয়েছে ২ হাজার ৫২৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার ও ঋণ হিসেবে ছাড় হয়েছে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
উন্নয়ন সহযোগীরা বলছে, তারা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করতে হয় সরকারকে। সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি করলে অর্থছাড়েও দেরি হয়। তাছাড়া প্রকল্পের শর্ত সঠিকভাবে পূরণ না হলে অনেক সময় প্রকল্প বাতিল করা হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, শর্তের কড়াকড়ির কারণে প্রতিশ্রুতির একটা বড় অংশ পাইপলাইনে থেকে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিশ্রুতি ও ছাড়ের মধ্যে একটা ব্যবধান থাকে। উন্নয়ন সহযোগীরা একবারে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ছাড় হয় প্রকল্পের পুরো মেয়াদে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরির কারণে অর্থছাড়ে বিলম্ব হয়।
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প দলিল প্রণয়ন, অনুমোদন, জমি অধিগ্রহণ, অর্থায়ন, পরিবেশ-সংক্রান্ত অনুমোদন ও কারিগরি জটিলতায় বাস্তবায়ন দেরি হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব, পরামর্শক নিয়োগে বিলম্ব, ত্রুটিপূর্ণ ক্রয় পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়া, কার্যাদেশে বিলম্ব ও বৈদেশিক অর্থছাড় না হওয়া অন্যতম কারণ। এছাড়া ভূমি গ্রহণে জটিলতা, প্রকল্প পরিচালকের অপর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষমতা ও প্রকল্পের ত্রুটিপূর্ণ ব্যয় প্রাক্কলনসহ কয়েকটি কারণে থমকে গেছে অনেক প্রকল্প।
অনুদান ও ঋণ হিসেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহায়তার প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে ছাড় হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। একই সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত সহায়তার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, আর ছাড়কৃত অর্থ ১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। আইডিবির প্রতিশ্রুতি ছিল ১৮৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার, ছাড় হয়েছে ৮০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রতিশ্রুত ৭৫ কোটি ৯০ লাখ ডলারের মধ্যে ৪৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ছাড় করেছে ইফাদ। চীনের প্রতিশ্রুত ১৩২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের মধ্যে ছাড় হয়েছে ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। কুয়েত ৬৪ কোটি ১০ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ছাড় করেছে ৪৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
এছাড়া জাপানের প্রতিশ্রুত ১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মধ্যে ছাড় হয়েছে ৮৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্যের প্রতিশ্রুত ২৯৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারের মধ্যে ছাড় হয়েছে ২৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার। দক্ষিণ কোরিয়া ৫৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছাড় করেছে ৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
ভারত ১৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ছাড় করেছে ৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ৪৬৯ কোটি ২০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছাড় করেছে ৪৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অন্যান্য ১ হাজার ৮৯৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছাড় হয়েছে ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এর বাইরে জাতিসংঘ অনুদান হিসেবে ৪৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলারের প্রতিশ্রুতি দিলেও ছাড় হয়েছে ৪৩৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দাতাদের কাছ থেকে অর্থ ছাড় করতে না পারায় এ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য ছাড় হয়নি। সম্প্রতি বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেগুলোর কোনোটির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু না হওয়ায় প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সহায়তার অর্থ অলস পড়ে আছে।
Leave a Reply