ঘোড়াশাল বিবিয়ানা পিডিবির বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রে অগ্রগতি ৫ শতাংশের নিচে

ইসমাইল আলী ও জেসমিন মলি | ২০১৫-১১-০১ ইং

www.bonikbarta.comবিদ্যুৎ উৎপাদনে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে সরকার। এজন্য বেশকিছু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত তিন বছরে কয়েকটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। যদিও এতে খুব বেশি অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। দু-তিন বছর আগে শুরু করা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজ হয়েছে ৫ শতাংশ বা তারও কম। ফলে নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসছে না পিডিবির কোনো কেন্দ্রই। গত ২৭ অক্টোবর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অগ্রগতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়।

প্রসঙ্গত, পিডিবির প্রকল্পে অগ্রগতি না থাকলেও প্রায় একই সময়ে শুরু করা আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি বা ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে।

বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে নানা কারণ দেখিয়েছে পিডিবি। তাদের মতে, প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াতেই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয়। অর্থায়ন জটিলতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে পরিবেশগত সমীক্ষা করতে হয়। এতেও বেশকিছু সময় পেরিয়ে যায়।

পিডিবির তথ্যমতে, বিবিয়ানা-৩ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নেয়া হয় ২০১২ সালে। গ্যাসভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনক্ষমতা ৪০০ মেগাওয়াট। ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে জাপানের মারুবিনি করপোরেশন ও দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তি সই করে পিডিবি। প্রায় তিন বছর পেরোলেও প্রকল্পটির কাজ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ।

৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে পিডিবি ৯৯৭ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। আর বাকি ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা ইসিএর আওতায় বিভিন্ন বহুজাতিক ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হবে। সম্প্রতি প্রকল্পটিতে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। এতে আগামী বছর জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০১৮ সালের জুনে চলে যাচ্ছে।

৩৩০ মেগাওয়াটের শাহজিবাজার কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পটি ২০১৩ সালে নেয়া হয়। সে বছর ২০ মে চীনের গুয়াংডং পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে পিডিবি। প্রকল্পটির পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদনে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থায়নের বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্য প্রকল্পগুলোর তুলনায় এ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো। তবে নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী বছর ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করা সম্ভব নয় বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের অবস্থা আরো খারাপ। ২০১৩ সালের জুলাইয়ে অনুমোদিত প্রকল্পটির অগ্রগতি শূন্য। ২ হাজার ৫১২ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। আর গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেনের আইসোলাক্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং সিঅ্যান্ডটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে।

পিডিবির সদস্য (জেনারেশন) মিনহাজউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতাই সময়মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করতে না পারার অন্যতম কারণ। বাকি যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলোও সময়ক্ষেপণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি অর্থায়ন জটিলতা, ঋণপত্র খোলা— এসব কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হয়। এগুলো আমলে নিয়েই কাজ করতে হয়। তবে মূল কাজ শুরুর পর আর বাস্তবায়ন বিলম্ব হয়নি কোনো প্রকল্পেই।

তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, পিডিবি যা পরিকল্পনা করে, তার অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয় না। কারণ তাদের দক্ষ লোকবল নেই। তাই সামর্থ্যের ঘাটতির কারণে প্রকল্প বিলম্ব হচ্ছে।

শুধু বড়ই নয়, মাঝারি ও ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নেও পিছিয়ে রয়েছে পিডিবি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্টের অগ্রগতিও তিন বছরে শূন্য। ২০১৩ সালের শুরুতে প্রকল্পটি নেয়া হয়। সে বছর ৩১ মার্চ চীনের হুবেই ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে অর্থায়নে এইচএসবিসির সঙ্গে চুক্তি হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। অথচ গত জুনে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে।

একই অবস্থা ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রিপাওয়ারিং প্রকল্পের। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর ও উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো হবে। এতে ২০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এজন্য গত বছর ১২ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের অলস্টম লিমিটেড ও চীনের সিএমসি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এর পর দেড় বছরে শুধু পরিবেশগত সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

বড়পুকুরিয়ায় ২৭৫ মেগাওয়াটের (তৃতীয় ইউনিট) বাস্তবায়নে গত বছর ৪ জুলাই চুক্তি সই করে পিডিবি। চীনের এইচইআই ও সিসিসিই যৌথভাবে কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে। এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি মাত্র ৪ শতাংশ।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগে দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে। তবে দক্ষ জনবল চাইলেও পাওয়া যায় না। আবার প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে। যেমন মহেশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি উন্নয়নই বড় চ্যালেঞ্জ। এভাবে প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বের পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে।

তিনি আরো বলেন, শুরুতে কিছুটা ধীর হলেও সাম্প্রতিক কালে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ খুব ভালো হচ্ছে। দ্রুত কাজ এগিয়ে চলছে। গত অর্থবছরও বিদ্যুৎ খাত শতভাগ উন্নয়ন বরাদ্দ ব্যয় করেছে। নির্ধারিত সময়েই কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।

Leave a Reply