পর্যটন শিল্পে বৈদেশিক আয় বেড়ে ৫ বছরে দ্বিগুণ

মনজুরুল ইসলাম ও জেসমিন মলি | ২০১৫-০৯-২৮ ইং

দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে গত কয়েক বছরে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বেসরকারি উদ্যোগে কক্সবাজার-সিলেট-চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে বেশকিছু তারকা মানের হোটেল-মোটেল। এতে বিদেশী পর্যটকের পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যেও ভ্রমণের প্রবণতা বেড়েছে। এতে আয় বাড়ছে পর্যটন শিল্পের। কেবল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ই গত পাঁচ বছরে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে সরকারের বৈদেশিক আয় হয়েছে ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১০ সালে এ শিল্পে বৈদেশিক আয় ছিল ৫৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা, যা ২০১৪ সালে বেড়ে হয় ১ হাজার ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১১ সালে ৬২০ কোটি ১৬ লাখ, ২০১২ সালে ৮২৫ কোটি ৪০ লাখ এবং ২০১৩ সালে ৯৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশী পর্যটকদের মাধ্যমে আয় হয়েছে সরকারের।

পর্যটন শিল্পে বৈদেশিক আয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান খান কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের পর্যটন খাতের প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার ফলে এ খাতে বৈদেশিক আয় বাড়ছে। ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখে উন্নীতকরণের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। রিজিওনাল কানেক্টিভিটি বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। এতে বিদেশী পর্যটক আরো বাড়ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, পর্যটন খাতের উন্নয়নে এবারো সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ নজর দিয়েছে। পর্যটন খাতকে চাঙ্গা করতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও দেশী পর্যটকই এ পর্যটন বর্ষ উদযাপনে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তবে পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের মধ্যে বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখে উন্নীতকরণ এবং এ খাত থেকে আয়ের পরিমাণ প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুবিধাদি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পর্যটন খাত বিকশিত হচ্ছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান ২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে ভালো হোটেল, দক্ষ ও মানসম্মত সেবার অভাব, বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিনোদনের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, যোগাযোগ ও যাতায়াত সমস্যা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় এ খাতের প্রকৃত সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে।

তাদের মতে, দেশের পর্যটন এলাকাগুলোর অনেক জায়গায় প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। মৌসুম (অক্টোবর-মার্চ) চলাকালে প্রতিদিন সুন্দরবনে ৭-১০ হাজার পর্যটক যান। অথচ সেখানে ন্যূনতম প্রাথমিক চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় কোনো পর্যটক অসুস্থ হয়ে পড়লে কাছাকাছি ভালো কোনো হাসপাতালে পৌঁছাতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এসব প্রয়োজনের দিকে জোর দিলে দেশের দুর্গম পর্যটন এলাকাগুলোয় যেতে উৎসাহিত হবে বিদেশী পর্যটকরা।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. নূরুল করিম বলেন, বর্তমানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত হোটেল রয়েছে। রুমগুলো আন্তর্জাতিক মানের এবং সেবার দিক থেকেও তা খুব একটা পিছিয়ে নেই। তবে কক্সবাজার ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় পর্যটকদের জন্য ভালো মানের হোটেল সংকট রয়েছে।

পর্যটন শিল্পে বৈদেশিক আয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে ভ্রমণ ছাড়াও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেক বিদেশী বাংলাদেশে আসছেন। বিজনেস ট্রাভেলারদের জন্য ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বেশকিছু তারকা হোটেল রয়েছে। এসব বিজনেস ট্রাভেলারও কিন্তু কাজের ফাঁকে দেশের পর্যটন এলাকাগুলোয় ভ্রমণ করছেন। এভাবেই এ শিল্পে বৈদেশিক আয় বাড়ছে।

উল্লেখ্য, পর্যটন আজকের বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বজুড়ে এ খাতের বার্ষিক আয় প্রায় ১ লাখ কোটি ডলার। ভারত, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোর জাতীয় আয়ের বড় একটা অংশই আসে পর্যটন খাত থেকে।

Leave a Reply