জরিমানায়ই শেষ কার্যক্রম মাত্রা ছাড়াচ্ছে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই
জেসমিন মলি | ২০১৫-১০-১০ ইং
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি এখনো। সাধারণত একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শব্দের সহনীয় মাত্রা ৪৫ ডেসিবল। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার ৪৫টি এলাকায় শব্দদূষণের মাত্রা এর তুলনায় অনেক বেশি। অথচ পাঁচ বছরে দূষণ নিয়ন্ত্রণে জরিমানা আদায়ের বাইরে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
বিধিমালা অনুযায়ী, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব দেয়া হয় পরিবেশ অধিদফতর, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক বিভাগকে। অথচ হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি সংস্থা তিনটি। পাঁচ বছরে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে সংস্থা তিনটির যৌথ অভিযানে ৫ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ শব্দদূষণকারী হর্ন খুলে নেয়া হয়েছে ৫০০ গাড়ি থেকে। তবে তাতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত শব্দদূষণের মধ্যে বসবাসের কারণে মানুষের শ্রবণশক্তির ক্ষয় ও কাজের আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসহিষ্ণুতা বাড়ে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, শব্দদূষণ প্রতিরোধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে গাড়িচালকদের হর্নের ব্যবহার কমানোয় তদারকি বাড়ানোর পাশাপাশি বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ডব্লিউএইচও-এর গবেষণায় উঠে এসেছে, ঢাকায় রাস্তার বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্ট, শিল্প এলাকা, আবাসিক, বাণিজ্যিক, নির্জন ও মিশ্র এলাকায় মাত্রা ছাড়িয়ে শব্দদূষণ হচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য সহনীয় মাত্রা ৫০ ডেসিবল নির্ধারণ করা হলেও এখানে দূষণের মাত্রা ৭০ ডেসিবল। শাঁখারীপট্টিতে ৭৫ ডেসিবলের শব্দ তৈরি হলেও এ এলাকার জন্য নির্ধারিত সহনীয় মাত্রা ৫৫ ডেসিবল। ইংলিশ রোডে দূষণ হচ্ছে ৯০ ডেসিবল। যদিও এখানকার জন্য সহনীয় মাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ ডেসিবল। একই রকমভাবে রাজউক এভিনিউতে সহনীয় ৭০ মাত্রার বিপরীতে দূষণের পরিমাণ ৮৮ ডেসিবল এবং তেজগাঁও এলাকায় শব্দের সহনীয় ৭৫-এর বিপরীতে দূষণ হচ্ছে ৮৫ ডেসিবল।
জানা গেছে, ঢাকায় শব্দদূষণের প্রধান উৎস যানবাহনের হর্নের অতিরিক্ত শব্দ। এছাড়া অতিরিক্ত শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে যানবাহনে ব্যবহূত হাইড্রোলিক হর্ন। শুধু যানবাহনের হর্ন নয়, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহূত লাউড স্পিকার, রাস্তার পাশের দোকানগুলোয় উচ্চৈঃস্বরে চালানো অডিও-ভিডিও, নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও কল কারখানাসহ সব মিলিয়ে শব্দদূষণ মাত্রা ছাড়াচ্ছে। দূষণের মান সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করায় এর শিকার হচ্ছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। একই সঙ্গে বিঘ্ন ঘটছে বিভিন্ন শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালে সেবাদানের কাজে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে শব্দদূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে একটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এ দূষণ মানবস্বাস্থ্যের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত। একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের ক্ষেত্রে মানবশরীরের জন্য শব্দের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল।
পরিবেশ অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর আওতায় শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এর প্রয়োগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এ যানবাহনের সাইলেন্সার পাইপ থেকে ৭ দশমিক ৫ মিটার দূরত্বে শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ ডেসিবল।
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, যানবাহন চালকরা আইন ভেঙে অতিরিক্ত মাত্রার হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দদূষণ করছেন। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিধিমালাটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯-এর আওতায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারছে না পরিবেশ অধিদফতর। বিষয়টি আইনের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের অনুন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬-এর প্রয়োগ নিশ্চিতের জন্য জুলাই ২০১৫-জুন ২০১৭-এর মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। যার প্রধান উদ্দেশ্য, শব্দদূষণ ও এর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বিধিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও দূষণ মাপার যন্ত্র সরবরাহ।
Leave a Reply