মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে কম্পিউটার

জেসমিন মলি | ২০১৫-০৪-২৭ ইং

www.bonikbarta.comকম্পিউটার— তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মৌলিক মাধ্যম। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কম্পিউটার পৌঁছেছে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে। এ হিসাবে দেশের নাগরিকদের বড় অংশই এখনো তথ্যপ্রযুক্তির এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন।

দেশে কম্পিউটার ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার এ তথ্য উঠে এসেছে মাত্র একদিন আগে প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৪-এ। তাতে বলা হয়েছে, দেশের মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষের বাড়িতে ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার রয়েছে।

বাসাবাড়িতে কম্পিউটারের এ হারে আবার ভিন্নতা রয়েছে শহর ও গ্রামে। গ্রামের তুলনায় শহরের বাসাবাড়িতে এ হার ঢের বেশি। জরিপ অনুযায়ী, শহরের ১২ শতাংশ বাড়িতে কম্পিউটার থাকলেও গ্রামাঞ্চলে এ হার মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গত কয়েক বছরে সরকার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমিয়েছে। পাশাপাশি চালু হয়েছে ডাটাভিত্তিক থ্রিজি প্রযুক্তি। সরকারি-বেসরকারি অনেক সেবাই কম্পিউটারভিত্তিক করা হয়েছে। তার পরও এ ধরনের সেবায় পিছিয়ে রয়েছে দেশ। যাওবা ব্যবহার হচ্ছে, তা মূলত শহরকেন্দ্রিক।

বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি সুমন আহমেদ সাবির বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণ মানুষ এখনো কম্পিউটারকে বিলাসপণ্য হিসেবেই মনে করে। দেশের বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্য এখনো এসব প্রযুক্তিপণ্য ক্রয়ের সীমার মধ্যে পৌঁছেনি। উচ্চহারে করারোপও এসব পণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকার অন্যতম কারণ। এতে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকে পণ্যটি কিনতে পারছে না।

তবে বাসাবাড়িতে কম্পিউটার ব্যবহারের এ তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, প্রতিবেদনের তথ্যে কোথাও গরমিল রয়েছে। কম্পিউটার সহজলভ্য করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদেরও কম্পিউটার দেয়া হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে কম্পিউটারভিত্তিক সেবার আওতা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর অন্যতম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় এগোচ্ছে না খাতটি। দ্রুতগতির ইন্টারনেট, ডিজিটাল কনটেন্টের সহজলভ্যতা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত প্রভাব রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। এ খাতের বিনিয়োগকারী ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এখনো সেভাবে গুরুত্ববহ হয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া দেশে কম্পিউটারের যে ব্যবহার, তার বেশির ভাগই হচ্ছে অনুৎপাদনশীল কাজে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়া উচিত ছিল। তবে বাস্তবে তা হয়নি। পাঁচ বছর আগে নেয়া অনেক প্রকল্পই এখনো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটলেও তা করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই। এসবই খাতটির প্রত্যাশিত অগ্রগতিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম্পিউটার পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমলেও এখনো প্রান্তিক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরেই রয়ে গেছে। ফলে তাদের কাছে সেভাবে পৌঁছছে না প্রযুক্তিপণ্যটি। শিক্ষার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশে লেনোভোসহ মাইক্রোসফট, সিসকো, ওরাকল ও আইবিএমের পণ্য বাজারজাত করছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেড (টিআইএসএল)। প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা শাহজামান মজুমদার বলেন, শিক্ষার হারে অগ্রগতি না হলে কম্পিউটারভিত্তিক সেবা গ্রহণে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বাড়বে না। শহরে শিক্ষার হার বেশি থাকায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যাও গ্রামের চেয়ে বেশি। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের ভালো প্রচারও হচ্ছে। তবে এর সুফল সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

Leave a Reply