প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব বাড়ছে ভেড়ার
জেসমিন মলি | ২০১৫-০৮-২৮ ইং
আগে ভেড়া পালন হতো মূলত কুষ্টিয়া, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলে। এখন পার্বত্য অঞ্চল, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায়ও বিস্তৃত হয়েছে ভেড়ার খামার। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারও ভেড়া পালনে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এজন্য চালু করা হয়েছে একটি প্রকল্পও।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বিশ্বে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভেড়া। বিদেশের বাজারে ভেড়ার মাংসের রয়েছে বেশ চাহিদা, যদিও দেশে আমিষের উৎস হিসেবে এখনো জনপ্রিয়তা পায়নি প্রাণীটি। শুধু আমিষের চাহিদা পূরণ নয়, পশম রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উৎসও হতে পারে ভেড়া।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ৬৪ জেলার ৪৮০টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ১২৮টি কন্ট্রাক্ট গ্রোয়িং খামারের উন্নয়ন করা হয়েছে।
সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশী ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। শুরুতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ২০১৮ সাল করা হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভেড়ার সংখ্যা ৩৫ লাখে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
চলমান প্রকল্পের সফলতায় ২৫ আগস্ট মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ভেড়া পালন সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সেখানে তিন হাজার ভেড়া থাকলেও ২০১৮ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ৫০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিনা আফরোজা বণিক বার্তাকে জানান, ভেড়া উৎপাদন বাড়াতে মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ভেড়া উৎপাদন জনপ্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দেশে প্রাণিজ আমিষের উৎস হিসেবে ভেড়ার মাংসের জনপ্রিয়তা না থাকলেও আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় এ পশু পালন বাড়ছে। আগে কুষ্টিয়া, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলে ভেড়া পালন হলেও এখন পার্বত্য অঞ্চল, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে ভেড়ার খামার।
খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেড়া রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয় কম। পূর্ণবয়স্ক ভেড়া ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলের তুলনায় ভেড়া কম সময়ে বড় ও বেশি ওজনের হয়। এগুলো বেশি মূল্যে বিক্রি করাও সম্ভব হয়।
ভেড়া পালন করে এখন স্বাবলম্বী কুষ্টিয়া জেলার তাহেরা বানু। তিনি বলেন, ভেড়া পালন লাভজনক। আমার খামারে ১৮টি ভেড়া রয়েছে। ভেড়া পালন করেই নিজের আয়ে ঘর তুলেছি।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নে এরই মধ্যে রাজাবাড়ীহাট, বাগেরহাট ও শেরপুরে তিনটি ডেমনস্ট্রেশন ভেড়ার খামার স্থাপন করা হয়েছে। ১২ হাজার ভেড়ার খামারিদের ভেড়া পালনে প্রশিক্ষণ ও চার হাজার ভেড়ার খামারিকে রিফ্রেশার্স ট্রেনিংও প্রদান করা হবে। ৩০০ জন মাংস বিক্রেতাকে ভেড়ার মাংসের গুণগত মান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানেরও পরিকল্পনা রয়েছে। উন্নত দেশের ভেড়ার খামারের কর্মপরিকল্পনা দেখতে বিদেশে স্টাডি ট্যুরের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। প্রকল্প থেকে ভেড়া খামারিদের সাপোর্ট সার্ভিস হিসেবে কৃমিনাশক, টিকা, মেডিসিন, ক্যাসট্রেটর মেশিন ও শেয়ারিং মেশিন সরবরাহ করা হবে। সফল খামারিদের পুরস্কার প্রদান ও দরিদ্র খামারিদের ভেড়ার শেড নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তাও দেয়া হবে।
এছাড়া ভেড়া উৎপাদন বাড়াতে গবেষণা কার্যক্রমও জোরদার করেছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার ভেড়ার জাত চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবেশে ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভেড়া উৎপাদন বাড়াতে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের যমুনা ও বরেন্দ্র অববাহিকায় দেশী ভেড়ার জাত উন্নয়ন, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা এবং কমিউনিটিভিত্তিক ভেড়া পালন এবং ভেড়া থেকে উৎপাদিত পশমের ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য তৈরির বিষয়ে ছয়টি গবেষণা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে ১৫ জন বিজ্ঞানীকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক একেএম আজাদ জানান, প্রকল্পের আওতায় ভেড়া উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ভেড়া থেকে উৎপাদিত পশমের মান বাড়াতেও কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভেড়ার সংখ্যা যেমন বাড়বে, একই সঙ্গে উৎপাদিত পশমের গুণগত মানও বাড়বে। ভেড়া উৎপাদন লাভজনক করতেই এ প্রকল্পের আওতায় কাজ করা হচ্ছে।
Leave a Reply