ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আসছে বিআরটিসির সব বাস
জেসমিন মলি | ২০১৫-০৪-১৬ ইং
ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আসছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) সব বাস। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি কার্যপত্র জমা দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাসের গতিবিধি নজরদারির পাশাপাশি আরো উন্নত মানের যাত্রী সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ২১৪টি রুটে সংস্থাটির ৯৫১টি বাস চলাচল করছে। এর মধ্যে গত বছরের ১০ এপ্রিল পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকা মহানগরীতে ১০টি বাসে ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধাসহ ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরবর্তীতে ওয়াই-ফাই বাসের সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ২৫। এবার সংস্থাটির সব বাস এর আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ
নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বণিক বার্তাকে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রকল্প সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেরই অংশ। এর মাধ্যমে প্রধান কার্যালয় ও প্রতিটি ডিপো থেকে বাসের অবস্থান জানা যাবে। ফলে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা বন্ধের পাশাপাশি সেবার মান বাড়বে। বিআরটিসিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই সরকারের লক্ষ্য।
বিআরটিসি-সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার থেকে রুটের বিভিন্ন বাসের সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। প্রয়োজনে নির্দেশনাও দিতে পারবে। বর্তমানে যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য কোনো আদর্শ যাতায়াত (ট্রানজিট) ম্যাপ বা দিকনির্দেশনা না থাকায় প্রয়োজনের সময় সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বাসযাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘব ও পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তারা আরো জানান, শুরুতে বিআরটিসির মতিঝিল-উত্তরা রুটের ২০টি আর্টিকুলেটেড বাসে (দুই বগির জোড়া লাগানো) লাইভ ট্র্যাকিং ও ফ্রি ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধাসংবলিত এ সুবিধা চালু হয়। ডিজিটাল বাস কার্যক্রম বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম। এ প্রকল্প সফল হওয়ায় সারা দেশের অন্যান্য রুটের বাসগুলোয় এ সেবা চালু করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াই-ফাই সুবিধাযুক্ত বাসে যাত্রীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং যে কোনো স্থান থেকে বাসের অবস্থান জানার সুযোগ রয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে একজন যাত্রী সহজেই বাসের রুট ও নির্দিষ্ট বাসটির বর্তমান অবস্থান জানতে পারবেন। পাশাপাশি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষও যে কোনো স্থান থেকে রুটের বিভিন্ন বাসের সর্বশেষ অবস্থা দেখতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবে। ডিজিটাল বাস কার্যক্রমের আওতায় যাত্রীদের জন্য ফ্রি ওয়াই-ফাই ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট এসব বাসের ভেতর স্টিকারে মুদ্রিত কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোড স্মার্টফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করে বিনামূল্যে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রী। তবে এ সুবিধা পেতে যাত্রীর স্মার্টফোনে অবশ্যই কিউআর কোড স্ক্যানার অ্যাপ্লিকেশন থাকতে হবে।
বর্তমানে বিআরটিসির ৯৫১টি বাস সচল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমে ৪৭টি আর্টিকুলেটেড বাস ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা হবে। এগুলো মতিঝিল-উত্তরা, মতিঝিল-বালুঘাট ও গাবতলী-আশুলিয়া রুটে চলাচল করে। পরবর্তীতে ঢাকা মহানগরীতে চলা কোরিয়ান এসি বাস ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আসবে। তৃতীয় ধাপে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে চলা দ্বিতল ও চায়না একতলা বাস ওয়াই-ফাই ও ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা হবে।
পরবর্তীতে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে শহরতলি রুটে চলা বাস এবং শেষ ধাপে দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে বাস ওয়াই-ফাই ও ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আসবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে তিন-পাঁচ বছর সময় লাগবে। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মো. আব্দুল্লাহিল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এটুআই প্রকল্পের অধীন বিআরটিসির সব বাসে ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সব বাস ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আসবে। এতে প্রধান কার্যালয়ে কম্পিউটারে সব বাসের অবস্থান নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি যাত্রীরাও বাসে ফ্রি ওয়াই-ফাই সেবা পাবেন।
এদিকে বিআরটিসির বাসে ই-টিকেটিং সেবাও চালু করা হয়েছে। বর্তমানে মতিঝিল-উত্তরা রুটে চলা এসি বাসে ই-টিকেটিং সেবা চালু রয়েছে। এতে কারিগরি সহায়তা করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এক্ষেত্রে এসপাস কার্ডের (ডিজিটাল কার্ড) মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করেন যাত্রীরা। ভবিষ্যতে এ সেবাও বিআরটিসির সব বাসে চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথমেই দূরপাল্লার বাসে ই-টিকেটিং চালু করতে চায় বিআরটিসি। এজন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
Leave a Reply