জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণ অব্যবহূত জমি ব্যবহারের সুযোগ থাকছে শিল্পনীতিতে
জেসমিন মলি | ২০১৫-০১-০৩ ইং
বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ আকর্ষণে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সরকার। প্রয়োজনে চাহিদামতো জমিও বরাদ্দ দেয়া হবে বিনিয়োগকারীদের। এজন্য কারখানা স্থাপনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অব্যবহূত জমি ব্যবহারের সুযোগসংবলিত ঘোষণা আসতে পারে শিল্পনীতিতে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় বড় বড় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এ দেশে বিনিয়োগ না করে ফিরে গেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণে জমি বরাদ্দের পাশাপাশি তাদের শিল্প করেও ছাড় দেয়া হবে। শিল্পনীতি-২০১৫-এর প্রথম খসড়ায় এসব ঘোষণার কথা উল্লেখ থাকবে।
জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন দেশে জাপানের যেসব কারখানায় উত্পাদন বন্ধ রয়েছে, তারা চাইলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা বিনিয়োগ করলে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেয়া হবে। চাহিদা অনুযায়ী জমিও বরাদ্দ দেয়া হবে। সে দেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে জাপানের অর্থায়নে বেশ কয়েক বছর আগে বিভিন্ন কারখানা স্থাপন করা হয়। তবে মজুরি বৃদ্ধির কারণে পণ্য উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সেসব কারখানা এখন বন্ধ রয়েছে। সুলভ শ্রম বিবেচনায় এসব কারখানা বাংলাদেশে স্থাপনের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন জাপানি বিনিয়োগকারীরা।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের ৩৯টি সরকারি শিল্প-কারখানার প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর অব্যবহূত জমি রয়েছে। এসব জমিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা গেলে তা দেশের শিল্পায়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ৩৯টি শিল্প-কারখানার ২২টি একেবারে বন্ধ, আংশিক বন্ধ নয়টি। এসব কারখানা বিক্রি না করে এর অব্যবহূত জমিতে নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। এসব জমিতে বিদেশী বিনিয়োগে নতুন কারখানা গড়ে উঠলে সারা দেশে শিল্পায়ন হবে, পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে শিল্পায়নের সবচেয়ে বড় বাধা জমি। কৃষিজমি রক্ষায় সরকার উদ্যোগ নেয়ায় জমির অভাবে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসছেন না। জমির অভাবে ফিরে যাচ্ছেন চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও কোরীয় উদ্যোক্তারা। কিন্তু বন্ধ শিল্প-কারখানার অব্যবহূত জমিতে পৃথক শিল্প জোন গড়ে তুললে অনেকেই আগ্রহী হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের ছয়টি, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন দুটি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন ১২টি, বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন একটি ও বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের একটি কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের আটটি কারখানা আংশিক চালু রয়েছে। এসব কারখানার অব্যবহূত জমির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩০০ একর। কেবল কর্ণফুলী পেপার মিলে অব্যবহূত জমি রয়েছে প্রায় ৬০০ একর।
এ বিষয়ে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, সরকারি শিল্প-কারখানার অব্যবহূত জমি অধিগ্রহণ করে আলাদা শিল্প জোন গড়ে তোলার প্রস্তাব খুবই যৌক্তিক। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। খুলনা, চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গে যেসব শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে, সেখানের অব্যবহূত জমি অবশ্যই শিল্পায়নের কাজে ব্যবহার করা উচিত। কাজটি যত দ্রুত করা হবে, দেশের জন্য ততই মঙ্গল। তবে তেজগাঁও ও টঙ্গীর মতো এলাকায় আর কোনো শিল্প জোনের প্রয়োজন নেই। কারণ এসব এলাকায় এখন আর শিল্পায়ন করা যুক্তিসঙ্গত নয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত দেশে জাপান থেকে আসা বিদেশী বিনিয়োগপ্রবাহ মোটামুটি ভালো অবস্থায় ছিল। ২০০৯ সালে জাপানের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার, ২০১০ সালে প্রায় ২ কোটি, ২০১১তে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার, ২০১২ সালে ৩ কোটি ৮ লাখ ও ২০১৩ সালে প্রায় ৪ কোটি ডলার।
nice report. thank u. carry on