উপেক্ষিত গবেষণা কার্যক্রম ভূতাত্ত্বিক জরিপে অপ্রতুল বরাদ্দ

জেসমিন মলি | ২০১৫-০১-২০ ইং

www.bonikbarta.comতেল-গ্যাসের বাইরে অন্যান্য খনিজ সম্পদ আবিষ্কার, মূল্যায়ন ও ভূতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা পরিচালনার একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ভূতত্ত্ব জরিপ অধিদফতর (জিএসবি)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কাজ গবেষণা। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক জরিপে অপ্রতুল অর্থ বরাদ্দ থাকায় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে বিষয়টি। ফলে খনিজ সম্পদ আবিষ্কার না হওয়ার পাশাপাশি তা ব্যবহারের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে।

জিএসবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর অধিদফতরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জরিপ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৭০ লাখ টাকা। এ অর্থে জরিপ পরিচালনা করা দুঃসাধ্য। গত অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৫০ লাখ টাকা। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল আরো কম, ৩০ লাখ টাকা। অথচ ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির আবিষ্কৃত খনিজ সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ১৮ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে সে সময় থেকে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ২৫৭ কোটি টাকা; যা আবিষ্কৃত সম্পদমূল্যের মাত্র দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।

জিএসবির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্রসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে খনিজ সম্পদ উন্নয়নে সংস্থাটি আরো ভূমিকা রাখতে পারত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত জিএসবি বিভিন্ন ধরনের খনিজের ৩০টি ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। এসব খনিজের মধ্যে রয়েছে— কয়লা, পিট, চুনাপাথর, সাদা মাটি, কাচ-বালি, কঠিন শিলা ও ভারী খনিজ। প্রতিষ্ঠানটির আবিষ্কৃত জামালগঞ্জ, বড়পুকুরিয়া, খালাসপীর, দীঘিপাড়া ও ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ২ হাজার ৩০৭ থেকে ৩ হাজার ৭১৬ মিলিয়ন টন।

পিটের ছয়টি ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে জিএসবি। এগুলো হলো— বাঘিয়া-চান্দা বিল, কোলা মৌজা, চাতাল বিল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আজমেরীগঞ্জ-সাল্লা ও পাগলা-চরকাই। এগুলোয় মজুদের পরিমাণ ৬৮ থেকে ১৫০ মিলিয়ন টন। চুনাপাথরের আবিষ্কৃত তিনটি ক্ষেত্র হলো— জয়পুরহাট, ট্যাকেরঘাট-ভাঙ্গারঘাট-লালঘাট-লামাকাট, বাগালীবাজার ও সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। এগুলোয় মজুদ ১২৮ মিলিয়ন টন। এছাড়া বিজয়পুর, দুর্গাপুর, পত্নীতলা, বড়পুকুরিয়া ও জয়পুরহাটে আবিষ্কৃত পাঁচটি সাদা মাটির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৪০ মিলিয়ন টন।

কাচ-বালির ছয়টি ক্ষেত্র হলো— চৌদ্দগ্রাম, শাহজিবাজার, মির্জাপুর-তেলিয়াপাড়া-নোয়াপাড়া, বালিজুড়ি, ব্রাহ্মণবাজার-ভাটেরা ও বড়পুকুরিয়া। এসব ক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ১১৬ মিলিয়ন টন। এখন পর্যন্ত কঠিন শিলার একটি মাত্র ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। ক্ষেত্রটি মধ্যপাড়ায়। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ১১৫ মিলিয়ন টন। এছাড়া কক্সবাজার, মহেষখালী, মাতারবাড়ী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, ব্রহ্মপুত্র নদবক্ষে বিভিন্ন ধরনের ভারী খনিজ আবিষ্কার হয়েছে জিএসবির হাত ধরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববাজারে খনিজ সম্পদের বড় বাজার রয়েছে। এ বাজার ধরতে জিএসবির গবেষণাকাজে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পরিপূর্ণ জরিপকরার আগে খনিজ সম্পদ-সংক্রান্ত গবেষণাকাজে বিদেশী প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়েই সংস্থাটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সমর্থ হতো। আর্থিক সীমাবদ্ধতা না থাকলে সংস্থাটি আরো বিস্তৃত আকারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত করতে সমর্থ। তাতে দেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। বিভিন্ন প্রচলিত-অপ্রচলিত খনিজ সম্পদ বিশ্ববাজারে প্রচুর দামে বিক্রি হয়। এসব অর্থ দিয়ে দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ সম্পদ ক্রয়ে ব্যয় করতে পারত। রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় এ-জাতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না দিয়ে তাকে পঙ্গু করে রাখা খারাপ দৃষ্টান্ত।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফর খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর তত্কালীন পাকিস্তান ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগের পূর্বাঞ্চলের অফিসের ৫০ জন কর্মকর্তা নিয়ে জিএসবি যাত্রা করে। পরবর্তীতে আরো ৩৭ জন কর্মকর্তা পাকিস্তান থেকে এসে এ অফিসে যোগ দেন। ১৯৭২ সালের ১০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার ঢাকায় অবস্থিত আঞ্চলিক কার্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো একটি জাতীয় ভূতাত্ত্বিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ার লক্ষ্যে তেল-গ্যাস ব্যতীত সব ধরনের খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট ভূতাত্ত্বিক উপাত্ত সংগ্রহ, পরীক্ষা, প্রাপ্ত সম্পদের মূল্যায়ন ও তথ্য সরবরাহ করার মূল দায়িত্ব দেয়। ১৯৮০ সালের মে মাসে এ অধিদফতরকে একটি স্থায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

 

1 Comment

Leave a Reply