রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প দুই দশকে অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ

জেসমিন মলি | ২০১৪-১২-০৩ ইং

সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অন্যতম পূর্বাচলে নতুন শহর গড়া। এক দশকের মধ্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু দুই দশক পার হতে চললেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। একাধিকবার সময় বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর। তবে এ সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সন্দিহান খোদ রাজউক কর্মকর্তারা।

www.bonikbarta.comএদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাড়ছে ব্যয়ও। শুরুতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। দুই দশকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাড়তি এ ব্যয়ের পুরোটাই বহন করতে হচ্ছে প্লটগ্রহীতাদের।

প্রকল্পে পূর্ত অংশের কাজে কিছুটা অগ্রগতি হলেও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ নিয়ে রয়েছে জটিলতা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কিছুটা আশার কথা শোনাচ্ছেন রাজউক কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আগামী বছরের মার্চে প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া শুরু হবে। তবে পানি ও গ্যাস সংযোগের কোনো সুখবর দিতে পারছেন না তারা। কারণ এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই এখনো হয়নি।

জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের পূর্তকাজের ৫০ শতাংশের মতো সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের মার্চে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া শুরু হবে। তবে এখনো গ্যাস ও পানি সংযোগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সূত্রমতে, প্রাথমিকভাবে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০০৫ সালে। তবে জমি অধিগ্রহণেই চলে যায় নির্ধারিত সময়ের বড় অংশ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয় ২০০৩ সালে। গাজীপুর অংশের জমি অধিগ্রহণ করতে লেগে যায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত। এসব শেষ করে এখন পর্যন্ত আট হাজার প্লট গ্রাহককে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও প্লটে বাড়ি তৈরির মতো নাগরিক সুবিধা তৈরি করতে পারেনি রাজউক।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অনেক আগেই প্লট বরাদ্দ পেলেও তা বুঝে পাওয়া নিয়ে শুরু থেকেই অনিশ্চয়তা ছিল। প্লটের কাগজপত্র হস্তান্তরে বিলম্বের কারণে এ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এজন্য দুই বছরের বেশি সময় রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়েছে। সম্প্রতি নকশাসহ প্লটটির মালিকানার সার্টিফায়েড কপি পাওয়া গেছে। তবে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় মোট ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে পূর্বাচল নতুন শহর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের ৩০টি সেক্টরের মধ্যে ২০টিরই কার্যত কোনো কাজ হয়নি। রূপগঞ্জ অংশে ভূমি উন্নয়নকাজে অগ্রগতি হলেও কালীগঞ্জে হয়েছে অর্ধেকেরও কম।

রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান বলেন, আইনি জটিলতার কারণে কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেনি রাজউক। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করাও সম্ভব হয়নি। তবে উচ্চ আদালতের রায় রাজউকের পক্ষে এসেছে। এখন আর আইনি কোনো ঝামেলা নেই। তাই দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

আবাসিক ও বাণিজ্যিক— দুই ধরনের প্লটই রাখা হয়েছে পূর্বাচল নতুন শহরে। মোট জমির ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আবাসন খাতে। ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্লট ব্যবহার হবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। এছাড়া প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য ১ দশমিক ৯ শতাংশ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ২ শতাংশ এবং গবেষণা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য ২ দশমিক ৩ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে সড়ক যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ দশমিক ৯ শতাংশ, বাহ্যিক ও সামাজিক অবকাঠামোর জন্য ৯ দশমিক ১, লেক ৬ দশমিক ৬, বন, বাস্তু উদ্যান ও সবুজ নগরায়ণের জন্য ৫ দশমিক ৯ এবং খেলাধুলার জন্য ২ দশমিক ৮ শতাংশ জায়গা।

প্রাথমিকভাবে কয়েক দফায় লটারির মাধ্যমে প্রায় ১৩ হাজার প্লট বরাদ্দ দেয় রাজউক। ২০১১ সালে চারটি সেক্টরে ছয় হাজার প্লট গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লটারির পর এলাকাবাসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও রাজউকের ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করে। তবে উচ্চ আদালতের রায় রাজউকের পক্ষে যায়।

 

Leave a Reply