সুইফট কোড হ্যাকড আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত আনতে চায় সোনালী ব্যাংক
জেসমিন মলি | ২০১৪-০৮-১৩ ইং
সুইফট কোড হ্যাকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেডের আত্মসাত্কৃত আড়াই লাখ মার্কিন ডলার ফেরত আনতে চায় সোনালী ব্যাংক। এছাড়া এ জালিয়াতির ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় নথি তলব করে ব্যাংকটিকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোনালী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তুরস্কে স্থানান্তর করা অর্থ ফেরত আনতে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি চিঠি দেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। এছাড়া সোনালী ব্যাংক তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাস, স্থানীয় তুরস্ক দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তুরস্কের বিদেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও যে ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, সে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, স্থানান্তর করা অর্থ ফেরত আনতে ও অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্তে ঘটনাসংশ্লিষ্ট নথি তলব করে সোনালী ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। চিঠিতে তুরস্কের স্থানীয় ব্যাংকের হিসাব খোলাসংক্রান্ত নথি ও অর্থ স্থানান্তরের রেকর্ডপত্র সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। তুরস্কের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এ ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদন সোনালী ব্যাংকে পাঠায়। চিঠিতে সে প্রতিবেদনও তলব করা হয়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানান, সুইফট কোড হ্যাক করে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় নথি তলব করে সোনালী ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নথি পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠানো হবে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সুইফট কোড হ্যাক করে জালিয়াত চক্র ইউকে শাখা থেকে একটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানের নামে তুরস্কের একটি ব্যাংকে মেসেজ পাঠায়। সোনালী ব্যাংকের নস্ট্রো হিসাব ডেবিট করে এ অর্থ পরিশোধ ও উত্তোলন করা হয়। ২০১৩ সালের ২ জুন এমটি ২০২ কভার ফান্ড মেসেজের মাধ্যমে এ অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে বলে সোনালী ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে। সুইফট কোডে এ ধরনের মেসেজের মাধ্যমে ক্রেতার পক্ষ হয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থ লেনদেন করে। সুইফট কোডে সোনালী ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে এ অর্থ স্থানান্তর করা হয়।
অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা তদন্তে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজীকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। তদন্ত দল এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শিল্প ভবন করপোরেট শাখার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন জুনিয়র অফিসার (আইটি) মোনোয়ার হোসেন ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার শাহ আলম। এ দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে অর্থ স্থানান্তর করা হয়। শিল্প ভবন করপোরেট শাখার শাখাপ্রধান ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগের এজিএমের বক্তব্যও নেয় তদন্ত কমিটি। তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে মোনোয়ার হোসেন, শাহ আলম ও সোনালী ব্যাংকের ইউকে লিমিটেডের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে। অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দুজনকে আসামি করে একটি মামলাও করে।
সূত্র জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমোদনহীন বিভিন্ন সফটওয়্যার ইনস্টলের মাধ্যমে এ অর্থ জালিয়াতির ঘটনা ঘটান।
Leave a Reply