সংকটের আবর্তে আবাসন শিল্প চলতি বছর অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়েছে ২৫০%

জেসমিন মলি | ২০১৪-১১-১৮ ইং

সংকটের আবর্ত থেকে বের হতে পারছেন না আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। বিক্রির ক্রমাবনতিতে ধুঁকতে থাকা এ খাতে ২০১৪ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের হার ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ফ্ল্যাট বিক্রির হার কমেছে ২১ শতাংশ।

আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব কর্তৃক ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের ওপর পরিচালিত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

www.bonikbarta.com

রিহ্যাব সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের পরিমাণ ১০ হাজার ৬০০। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১২৪। অর্থাৎ অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ২৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১২ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৮৪। পাশাপাশি বিক্রির পরিমাণও কমেছে। ২০১৪ সালে মাত্র ১ হাজার ৪৭৭টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬৩। অর্থাৎ ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ২১ শতাংশ। ২০১২ সালে আবাসন ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পেরেছিলেন ২ হাজার ২৯৩টি ফ্ল্যাট।

গত তিন বছরে ১৮৭টি প্রতিষ্ঠান মিলে ৬ হাজার ৩৭টি ফ্ল্যাট হস্তান্তরে সক্ষম হয়েছে। ২০১৪ সালে হস্তান্তর হয় ১ হাজার ৭১৭টি ফ্ল্যাট। ২০১৩ সালে ২ হাজার ২৫৩ ও ২০১২ সালে হস্তান্তর হয় ২ হাজার ৬৭টি ফ্ল্যাট।

এ ব্যাপারে রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও শেলটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কয়েক দফা দাম কমিয়েও আমরা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।’ এখন আর কেউ নগদ অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কিনতে চায় না বলে জানান তিনি।

রিহ্যাবের অন্তর্ভুক্ত ১ হাজার ২২০ সদ্যস্যের মধ্যে মাত্র ১৮৭টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। সব সদস্যের তথ্য সমন্বয় করলে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে জোর অনুমান সংশ্লিষ্টদের।

আবাসন ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে বিক্রি হয়নি; যে কারণে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা। ক্রেতা আকর্ষণে দাম কমানো হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। রিহ্যাব সূত্র জানায়, ২০০০ সালে তাদের সদস্যসংখ্যা ছিল ২০০। আর বর্তমানে আবাসন প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

আবাসন খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল শহরে রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির দাম বাড়তি থাকে। অনেকে সুযোগ বুঝে কৃত্রিমভাবেও দাম বাড়ান। তখন অনেক ব্যবসায়ী এ খাতে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ বাড়ান। ২০০৯ সালের পর দেশে আবাসন খাতের চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুন অনেকে এ খাতে ব্যবসা শুরু করেন। পরে ২০১২ সালের মধ্যে এ খাতের সরবরাহ চাহিদাকে ছাড়িয়ে যায়। চাহিদা কমার ফলে দামও কমে। তখন থেকেই মন্দা চলছে এ খাতে। বিক্রি শূন্যের কোটায় নেমে যাওয়ায় মূল্যছাড়ের পদ্ধতি বেছে নেন উদ্যোক্তারা।

তবে বিশ্লেষকদের মত, দাম কমলেও আবাসন খাত অতিমূল্যায়িত। ২০০৭ সালের পর ফ্ল্যাটের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়তে থাকে। এখন দাম কমলেও বলতে গেলে সে সময়ের তুলনায় দাম বেশি।

এর আগে আবাসন খাতের সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে রিহ্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, দাম কমে যাওয়ায় এখন এ খাত ক্রেতাদের বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত। অ্যাপার্টমেন্টের দাম কমে এখন একটি স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। এখন ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে তারা প্রত্যাশামাফিক দামে কিনতে পারবেন। তবে বিক্রি করতে গেলে তাকে লোকসানে পড়তে হবে।

উল্লেখ্য, আবাসন খাতের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রায় ২৫ লাখ শ্রমিক। এছাড়া রড, সিমেন্ট, ইট, বালি, কাচ, রঙ, আসবাবসহ অনেক সহযোগী শিল্প এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। এরই মধ্যে আবাসন শিল্পের মন্দার প্রভাব বিভিন্ন খাতে পড়তে শুরু করেছে। সরকারের রাজস্ব আয়ও কমছে এর ফলে। সব মিলিয়ে আবাসন খাতের মন্দা ঠেকানো জরুরি মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

Leave a Reply