তাৎক্ষণিক সেবার অভাব এটিএম বুথে গ্রাহক ভোগান্তি বাড়ছে

জেসমিন মলি তারিখ: ০১-১২-২০১৩

দেশে ব্যাংকগুলোর অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) সেবা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেলেও এর মান নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। তাদের অভিযোগ, সেবাটি নিতে প্রায়ই নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এটিএম সেবাসংক্রান্ত কোনো সমস্যারই তাৎক্ষণিক সমাধান মিলছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জানিয়েও লাভ হচ্ছে না।

গ্রাহকরা জানান, এটিএম বুথ ব্যবহার করতে গিয়ে তারা দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। একটি হলো, টাকা উত্তোলনের সময় কার্ড আটকে যাওয়া এবং অন্যটি উত্তোলন না করলেও হিসাব থেকে টাকা কমে যাওয়া। এছাড়া গ্রাহকের সম্মতি ছাড়া বিভিন্ন চার্জ কাটা ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটায় ক্রেডিট কার্ডের মতো ব্যাংক অর্থলগ্নি না করলেও পয়েন্ট অব সার্ভিস (পিওএস) থেকে একই হারে চার্জ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। ব্যাকআপ সার্ভিস না থাকায় প্রায়ই বন্ধ থাকছে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ।
সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গ্রাহক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ রাসেল আবদুল্লাহ ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা তোলার সময় এটিএম মনিটরে ‘ইনভ্যালিড কার্ড’ প্রদর্শিত হয়। কিন্তু তার কার্ডে কোনো ত্রুটি ছিল না। দ্বিতীয়বার চেষ্টায় তিনি ১৯ হাজার ৫০০ টাকা তোলেন। রাসেল আবদুল্লাহ বলেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও মনিটরে ইনভ্যালিড কার্ড লেখা দেখানোর কোনো কারণ নেই। তার পরও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
২৩ নভেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় খায়রুল আলম চৌধুরীর কার্ডটি মেশিনে আটকে যায়। বিষয়টি তিনি বুথের নিরাপত্তারক্ষীকে জানান। নিরাপত্তারক্ষী তাকে বুথের দেয়ালে লিখে রাখা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করেও তিনি ওই ব্যাংকের গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে নিরাপত্তারক্ষীর পরামর্শে ব্যাংকটির নিকটস্থ শাখায় গিয়ে তিনি সমস্যা জানান। খায়রুল আলম বলেন, এটিএম বুথে মাঝে মধ্যেই কার্ড আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। পরে অনেক ছোটাছুটি করে সে কার্ড উদ্ধার করতে হয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে জানিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ক্ষেত্রবিশেষে এটিএম-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান পেতে গ্রাহকদের ১৫ দিন পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের গ্রাহক সাহানোয়ার শাহীন জানান, সম্প্রতি তিনি রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় ব্যাংকটির এটিএম বুথে যান টাকা তুলতে। কার্ড ব্যাবহারের পর সেটি মেশিন থেকে বেরিয়ে এলেও টাকা আসেনি। পরে এ ব্যাপারে ব্যাংকটির নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তিনি যে অঙ্কের টাকা তুলতে চেয়েছিলেন, তা হিসাব থেকে বাদ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাকে লিখিত অভিযোগ জানাতে বলা হয়। চার দিন পর ওই টাকা তার হিসাবে জমা হয়।
প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীরা বলছেন, সাধারণত সফটওয়্যারজনিত সমস্যার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাব, নেটওয়ার্ক সমস্যাও এজন্য অনেকটা দায়ী। তবে শুধু সফটওয়্যারজনিত কারণে গ্রাহক দুর্ভোগে পড়ার কথা অস্বীকার করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরীন। তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকই বিদেশী সফটওয়্যার ব্যবহার করে। তাই শুধু সফটওয়্যারের কারণে সেবার মানে সমস্যা হচ্ছে না। ছেঁড়া টাকা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবও এজন্য দায়ী।
প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের সংগঠন সিটিও ফোরামের সভাপতি ও এনসিসি ব্যাংকের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা তপন কান্তি সরকার বলেন, ‘এটিএম মেশিন অব্যবহূত পড়ে থাকা ব্যাংকেরই ক্ষতি। মেশিনে লেনদেন হলে ব্যাংক সেখান থেকে আয় করে। এ কারণে আমরা সবসময় চেষ্টা করি গ্রাহককের সন্তুষ্টি অর্জনের। কিন্তু মাঝে মধ্যে কিছু ত্রুটি থেকে যায়। তার পরও আমরা চেষ্টা করি সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার।’
বিগমাসটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিস্টেম আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ ইসলাম বলেন, দেশে ব্যবহূত বেশির ভাগ এটিএম মেশিন রেসপন্স কোড বুঝতে অক্ষম। এ কারণে কার্ড ভ্যালিড হলেও ইনভ্যালিড দেখায়। এটি এক ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের ৫ হাজার ২৩২টি এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। সারা দেশে এ ব্যাংকের বুথ রয়েছে ২ হাজার ৪০৩টি। দ্বিতীয় সর্বাধিক ৩৩৩টি এটিএম বুথ রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। এছাড়া বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রায় সব ব্যাংকও এ সেবা দিচ্ছে।
এসব প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, সময়ে সময়ে এটিএম বুথে পরিদর্শন করা হয়। এছাড়া এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। গ্রাহক ভোগান্তি রোধে উদ্যোগের পাশাপাশি অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে।

Leave a Reply