বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প অর্থায়নে অনাগ্রহী উন্নয়ন সহযোগীরা

মীর মনিরুজ্জামান ও জেসমিন মলি | তারিখ: ২০-০১-২০১৪
দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী নয় উন্নয়ন সহযোগীরা। এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছে প্রস্তাব পাঠানো হলেও নমনীয় শর্তে ঋণদানে এসব সংস্থার সাড়া মেলেনি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের কঠিন শর্তের ঋণপ্রস্তাব বিবেচনা করছে সরকার।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে অর্থায়নের প্রস্তাব পাঠানো হলেও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ প্রকল্পে তাদের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে দেয় সরকারকে। এছাড়া জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি), সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড করপোরেশন (এসডিসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এসব সংস্থাও এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। ফলে নমনীয় শর্তে ঋণ পাওয়ার আশা নেই। এ কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কঠিন শর্তের সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংকের কঠিন শর্তের ঋণের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার পর একই শর্তে ঋণদানে আগ্রহী হয়েছে আরো চার প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— ফ্রান্সের এইচএসবিসি, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, যুক্তরাজ্যের সিডব্লিউজি গলফ ইন্টারন্যাশনাল ও চীনের গ্রেট ওয়াল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অধিকতর গ্রহণযোগ্য ঋণপ্রস্তাবটি বিবেচনায় নেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) পরামর্শে ঋণগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বঙ্গবন্ধু-১-এ সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে অর্থায়নে আগ্রহী এক্সিম ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের একাধিক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। তবে ব্যাংকটির দেয়া প্রস্তাবে বেশকিছু শর্তের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনমনীয় ঋণবিষয়ক স্থায়ী কমিটি। প্রস্তাবের এসব শর্ত কঠিন বলে উল্লেখ করেছে কমিটি। এজন্য ব্যাংকটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শর্তগুলো তুলনামূলক নমনীয় করার বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিক বণিক বার্তাকে বলেন, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট হিসেবে প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য কয়েকটি ঋণপ্রস্তাব পাওয়া গেছে। আমরা এসব প্রস্তাবের শর্তাবলি নিরীক্ষা করে নিজেদের মতামত ইআরডিতে পাঠিয়েছি। সবকটি প্রস্তাবের সার্বভৌম গ্যারান্টি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন ইআরডির অনুমোদনসাপেক্ষে ঋণপ্রস্তাব কার্যকর করা হবে।
স্যাটেলাইট উেক্ষপণে পরামর্শক সেবা গ্রহণের জন্য ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ‘প্রিপারেটরি ফাংশন অ্যান্ড সুপারভিশন ইন লঞ্চিং এ কমিউনিকেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দায়িত্ব দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত হলে একটি কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উেক্ষপণের কাজ এগিয়ে নেয়া হবে।
২০১৩ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উেক্ষপণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে অর্থায়নের সুপারিশ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থ ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ৪২ লাখ। বাকি ১ হাজার ৬৮৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বিদেশী উত্স থেকে সংগ্রহ করা হবে। সরকারি অংশে অর্থ বিটিআরসির তহবিল থেকে সংগ্রহ করা হবে।
বর্তমানে একটি প্রকল্পের আওতায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উেক্ষপণের কার্যক্রম চলছে। স্যাটেলাইট উেক্ষপণে পরামর্শকবিষয়ক প্রকল্প কার্যালয়ের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণে মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে গত বছরের ২৯ মার্চ চুক্তি করেছে বিটিআরসি। বাজার মূল্যায়ন, বাজারজাতকরণ, কাঠামো তৈরি, স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটিকে এসব কাজ শেষ করতে হবে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট এবং রেডিওগুলো বিদেশী স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করছে তারা। আগামীতে এ ভাড়া বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলারে গিয়ে পৌঁছবে বলে জানা গেছে। তবে নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলে এ টাকা দেশেই রাখা সম্ভব হবে।

 

Leave a Reply