তেল আমদানির নামে অর্থ পাচার অনুসন্ধানে দুদক
জেসমিন মলি | ২০১৪-১০-১৩ ইং
আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়েও বেশি দামে জ্বালানি তেল আমদানি করছে বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুেকন্দ্র। এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তেল আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে চার সদস্যের একটি দল গঠন করেছে দুদক। এ দলের প্রধান করা হয়েছে দুদকের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমকে। সদস্য হিসেবে রয়েছেন সহকারী পরিচালক মাহবুবুল হক, উপসহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম ও ওমর ফারুক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) তেল আমদানিসংক্রান্ত নথি তলব করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তেল ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন চুক্তি ও ব্যাংক লেনদেনের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে প্রতি টন ৬৫৯ দশমিক ২৪ ডলারে তেল আনে সামিট। যদিও তখন সিঙ্গাপুরে তেলের দাম ছিল ৬১৪ দশমিক ২৭ ডলার। জাহাজ ভাড়াসহ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি টনে ব্যয় হয়েছে ৬৭৬ দশমিক ৭৪ ডলার। এছাড়া ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ ভাড়াসহ প্রতি টন ৬৬৮ দশমিক ৯৫ ডলারে তেল আনে। যদিও আন্তর্জাতিক মূল্যবিষয়ক প্রকাশনা প্লেটসের প্রকাশিত দর অনুযায়ী তখন সিঙ্গাপুরে ফার্নেসের দাম ছিল ৬১১ ডলার। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্যে তেল আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে জানান, বাড়তি দামে তেল আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। কারো বিরুদ্ধে অর্থ পাচারে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে জ্বালানি তেল আমদানি করে বিপিসি। এর বাইরে কয়েকটি বিদ্যুেকন্দ্রকে জ্বালানি তেল আমদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে। শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব কেন্দ্রকে জ্বালানি তেল আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য অনুমোদন পাওয়া ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটি ওরিয়ন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের। এগুলো হলো— আইইএল কনসোর্টিয়াম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট ও ডাচ্-বাংলা পাওয়ারের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট কুইক রেন্টাল এবং ডিজিটাল পাওয়ারের গগননগর ১০২ মেগাওয়াট আইপিপি। অন্যগুলো হলো— ইসিপিভি চিটাগাংয়ের পটিয়া ১০৮ মেগাওয়াট, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের ৫০ ও বাংলাক্যাটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাকন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট।
এর আগে অনুমোদন পাওয়া কেন্দ্রগুলোর তালিকায় আছে সামিট নারায়ণগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের খুলনা ১১০, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট-২-এর ১১৫ ও খান জাহান আলী পাওয়ার কোম্পানির নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট। এছাড়া নতুন অনুমোদন পাওয়া বারাকা পতেঙ্গা ও জুলদা কেন্দ্র দুটি আগে সীমিত সময়ের জন্য অনুমোদন পায়।
তেল আমদানির নামে অর্থ পাচার ছাড়াও পিডিবি ও বিপিসির বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে লোকবল নিয়োগে অনিয়ম, বিভিন্ন প্রকল্পে ক্রয়সংক্রান্ত অনিয়ম, জ্বালানি খরচের নামে অর্থ আত্মসাত্সহ নয় ধরনের অভিযোগ।
সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশমালা তৈরি করবেন দুদক কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে আইনের ত্রুটি-বিচ্যুতি সংস্কারের পাশাপাশি যেসব বিধিবিধানের কারণে অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হবে। এসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে দুদক গত সেপ্টেম্বরে তেল চুরির মাধ্যমে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে বিপিসির ঊর্ধ্বতন ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করে। মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বিল পরিশোধের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তারা আমদানিকারকদের সহায়তায় ২০০৯-১০, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে রিফাইন তেল, অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল ইত্যাদি আমদানির মাধ্যমে প্রকৃত এলসির পরিমাণ লোডিং পয়েন্ট সার্ভে রিপোর্টের পরিমাণের চেয়ে ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার ৫৭৬ লিটার কম দেখানোর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। কম দেখানো তেলের মূল্য ৩৯৪ কোটি ৫০ লাখ ৯৬ হাজার ৪৫৬ টাকা।
Leave a Reply