ব্যর্থতা-দুর্নীতি সত্ত্বেও আবারো হোসেন মনসুর?

জেসমিন মলি | ২০১৪-১০-১৬ ইং

পাঁচ বছর ধরে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন ড. হোসেন মনসুর। কিন্তু উল্লেখ করার মতো সাফল্য দেখাতে পারেননি তিনি। গ্যাস উৎপাদন বা সরবরাহ বৃদ্ধিতে অগ্রগতি যেমন হয়নি, তেমনি সাফল্য নেই কয়লা খাতেও। উপরন্তু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তা অনুসন্ধান করে দেখছে। তার পরও ব্যর্থতা ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই আবার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান পদের দাবিদার ড. হোসেন মনসুর।

www.bonikbarta.com

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে ড. হোসেন মনসুর নিয়োগ পান ২০১০ সালের আগস্টে। দ্বিতীয় দফায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান ২০১৩ সালের অক্টোবরে। ১৮ অক্টোবর তার নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

দীর্ঘ পাঁচ বছরেও গ্যাস সংকট কাটাতে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হিসেবে লক্ষণীয় কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি তিনি। বরং সংকট কাটানোর নামে তিন বছরের বেশি সময় ধরে আবাসিকে নতুন সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় গ্যাস দেয়া হচ্ছে পর্যায়ক্রমে (রেশনিং)। শিল্পের ক্ষেত্রে সংযোগ দেয়া হচ্ছে বিশেষ বিবেচনায়। তার পরও বন্ধ করা যায়নি বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির অবৈধ সংযোগ।

চেয়ারম্যান হিসেবে ড. হোসেন মনসুর দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯-১০ অর্থবছরে গ্যাস খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেটি কমতে কমতে গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭১ শতাংশে।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনেক প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করতে পারেননি ড. হোসেন মনসুর। ২০১২ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের আগে এটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম।

সুখকর নয় কয়লা খাতের অবস্থাও। শুরু থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হলেও বড়পুকুরিয়ার বাইরে নতুন কোনো খনি উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি কয়লা তোলার জন্য নীতি করতে দুবার কমিটি করলেও সরকার ওই কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেনি। বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদন বাড়ালেও অন্য খনিগুলোয় কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি পেট্রোবাংলা।

গ্যাস খাত নিয়ে ব্যর্থতার মধ্যেই পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। দুদক সূত্র জানায়, কর্ণফুলী গ্যাসফিল্ড কোম্পানিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ৭ সেপ্টেম্বর ড. হোসেন মনসুরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন কমিশনের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা শেখ আবদুস সালাম। কিন্তু দাখিল করা অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমলে নেয়নি কমিশন। ২২ সেপ্টেম্বর তা পুনরায় পর্যালোচনা করতে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ওই নির্দেশনার এক সপ্তাহ পর শেখ আবদুস সালামকে অনুসন্ধান কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তার স্থলে নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দুদকের উপপরিচালক ঋত্বিক সাহাকে। যদিও এ কর্মকর্তার কাজ মূলত  অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের। তাই স্বাভাবিকভাবেই ঋত্বিক সাহার ওপর দায়িত্ব অর্পণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কমিশনে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর লোকবল নিয়োগ দেয়ার সময় কোনো জেলা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করেননি। যে নিয়োগ দিয়েছেন, তা পছন্দের লোকদের। ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ২১ জনকে তিনি নিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা থেকে। এ অভিযোগেই ড. হোসেন মনসুরের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেন সে সময়কার অনুসন্ধান কর্মকর্তা। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের পাশাপাশি মামলার সুপারিশ করা হয় কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সানোয়ার হোসেন, সাবেক এমডি জামিলে আলীম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহসান হাবীব, সচিব নিয়াজুর রহমানের বিরুদ্ধেও। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এসব কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এর আগে সংসদীয় কমিটির তদন্তে জনবল নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে দুদকে চিঠি পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে দুদক কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন (তদন্ত) জানান, অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কিছু জটিলতা ছিল। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের ধারা ঠিকমতো না বুঝেই প্রতিবেদনে মামলার সুপারিশ করেছেন বলে মনে হয়েছে। এ কারণে পুনরায় অনুসন্ধানের জন্য অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, তদন্তকাজ প্রভাবিত করতেই আকস্মিকভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর আবদুল মতিনকে সরিয়ে দেয়া হয়। মাত্র ছয় মাসের মাথায় তাকে সরিয়ে নিয়োগ দেয়া হয় হোসেন মনসুরের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আইয়ুব খানকে।

এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ড. হোসেন মনসুরের সেলফোনে যোগাযোগ করা হলেও প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

 

Leave a Reply