আন্তর্জাতিক কল হাজার কোটি টাকা বকেয়া আদায়ে তৎপরতা নেই বিটিসিএলের
জেসমিন মলি | ২০১৪-১০-১১ ইং
রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারদের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে। বিরোধের জেরে অপারেটরদের কাছে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বৈদেশিক কলের রাজস্ব ভাগাভাগির প্রায় হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে।
এ নিয়ে কোনো তৎপরতাই নেই সংস্থাটির। চুক্তি করার সময় বিটিসিএলের স্বার্থ প্রাধান্য না দিয়ে সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তা উেকাচের বিনিময়ে অপারেটরদের স্বার্থ প্রাধান্য দেয়। এ কারণে হাজার কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও চুক্তির দুর্বলতায় এসব অপারেটররের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিটিসিএল। উল্টো এখন বিটিসিএলের বিরুদ্ধেই মামলা করছে এসব অপারেটর।
বকেয়া পরিশোধ না করে বিটিসিএলের বিরুদ্ধে মামলার পাশাপাশি কিছু অপারেটর আশ্রয় নিচ্ছে আরবিট্রেশন বা সালিশ নিষ্পত্তির। বকেয়া আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে বিটিসিএলেরই একশ্রেণীর কর্মকর্তা অপারেটরদের আরবিট্রেশনের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বৈদেশিক টেলিফোন কল আদান-প্রদানের জন্য ৮৬টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিটিসিএলের চুক্তি রয়েছে। ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ পরিশোধ করছে না আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার অপারেটররা। অর্থ আদায়ে ২৫টি অপারেটরের সঙ্গে বিটিসিএলের আরবিট্রেশনসহ অন্যান্য মামলা চলছে। বাকি ক্যারিয়ারের বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ে মামলার প্রক্রিয়া চলমান বলে বিটিসিএল জানিয়েছে।
বিটিসিএল ও ক্যারিয়ার অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক কলের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার অপারেটরদের সঙ্গে রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি আছে বিটিসিএলের। চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কলপ্রতি চার্জের প্রতি ৩ সেন্টের ৫১ শতাংশ পাবে বিটিসিএল। বাকি ৪৯ শতাংশ পাবে ক্যারিয়ার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক অপারেটর জমির টেলিকমের কাছে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কলের রাজস্ব ভাগাভাগির অংশ হিসেবে বকেয়া রয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টক টাইম ও রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে অর্থ পরিশোধ বন্ধ রাখে জমির টেলিকম। অর্থ বিরোধ নিয়ে সালিশ আদালতে একটি মামলা চলমান।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিজিটেক পিটিই লিমিটেডের কাছে পাওনার পরিমাণ ৯০ কোটি টাকা। রাজস্ব ভাগাভাগির অংশ নিয়ে বিরোধ শুরু হয় ২০১০ সালে। ওই বছরের জুন থেকে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে আপত্তি তোলে অপারেটরটি। অর্থ পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক গ্যারান্টির সাড়ে ৩ কোটি টাকা নগদায়ন করে বিটিসিএল। অন্য দুটি ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হলে অপারেটরটি আদালতে মামলা করলে প্রক্রিয়াটি স্থগিত হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অপারেটর এনটেল কমিউনিকেশন্সের কাছ থেকে ৬৩ কোটি টাকা বকেয়া আদায়ে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছে বিটিসিএল। সিঙ্গাপুরভিত্তিক আইপাওয়ার কমিউনিকেশন্স পিটিইর কাছ থেকে বকেয়া ৪৬ কোটি টাকা আদায়ে ব্যাংক গ্যারান্টি ভাঙানোর চেষ্টা করছে বিটিসিএল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জিডিএক্সসি ইনকরপোরেশনের কাছ থেকে ৩২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আদায়েও মামলার প্রক্রিয়া চলমান। আরো ৪৫টি ক্যারিয়ারের কাছে বিটিসিএলের বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়নের পাশাপাশি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে বিটিসিএল। ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়ায় কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধেও মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈদেশিক ক্যারিয়ার নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টি যাচাই-বাছাই না করেই তাদের সংযোগ দেয়া হয়। এরই মধ্যে বেশকিছু ব্যাংক গ্যারান্টি ভুয়া বলে বিটিসিএলের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। চুক্তি করার সময় বিটিসিএলের স্বার্থ প্রাধান্য না দেয়ার পরিবর্তে একশ্রেণীর কর্মকর্তা অর্থের বিনিময়ে অপারেটরদের স্বার্থ প্রাধান্য দেন। এ কারণে হাজার কোটি টাকা বকেয়া থাকলেও চুক্তির দুর্বলতায় এসব অপারেটরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিটিসিএল।
এ প্রসঙ্গে বিটিসিএলের সদস্য (অর্থ) ড. আবু সাঈদ খান বণিক বার্তাকে জানান, বকেয়া আদায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন করে বকেয়ার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থ আদায়ে ক্যারিয়ারগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান। বিটিসিএলের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তিনি জানান, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply