দাম কমলেও ফ্ল্যাট বিক্রিতে মন্দা

জেসমিন মলি | তারিখ: ২৮-০৯-২০১৩

চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাট কেনায় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তিন বছর আগের তুলনায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এর দাম কমেছে ২৫ শতাংশ। তার পরও মন্দা কাটছে না আবাসনশিল্পে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবিক্রীত রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ফ্ল্যাট। এগুলো বিক্রি না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাট বিক্রি হতো ১৬ হাজার টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরে তিন বছর আগে প্রতি বর্গফুটের দাম ছিল ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এখন তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। সে হিসাবে দাম কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। তার পরও বিক্রি হচ্ছে না ফ্ল্যাট।
এ বিষয়ে শেলটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ড. তৌফিক এম. সেরাজ বলেন, ‘ফ্ল্যাটের বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। গত বছরের রমজানে শেলটেক ১৫টি ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিল। কিন্তু এবার কোনো ফ্ল্যাটই বিক্রি হয়নি। এ কারণে দাম কমাতে বাধ্য হয়েছি। তার পরও ক্রেতা মিলছে না।’
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব জানায়, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনীতির মন্দার কারণে স্থবির হয়ে রয়েছে আবাসনশিল্প। বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ এ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নজরদারির ভয়ে কেউ এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রিহ্যাবের হিসাবমতে, বর্তমানে রাজধানীতে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। ২০১০ সাল থেকে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বাসাবাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ থাকায় কমে যায় ফ্ল্যাট বিক্রি। তবে এ বছর থেকে পুনরায় গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত হয়। খাতটিকে অনুৎপাদনশীল উল্লেখ করে ঋণদানে নিরুত্সাহিত করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে এ খাতে বিনিয়োগ করা ১৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ আদায় নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ও অন্যান্য ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে এসব ঋণ আদায়ে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো বলছে, ঋণগ্রহীতাদের সাড়া না পাওয়ায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা কার্যকর করতে পারছে না।
রিহ্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহিদুজ্জামান এসব বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও রয়েছে। এ কারণে কেউ সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। ব্যাংকের ঋণ দেয়াও স্থগিত রয়েছে। এসব কারণে ফ্ল্যাটের দাম কমালেও বিক্রিতে প্রভাব পড়ছে না। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলে হয়তো আবারো এ খাত চাঙ্গা হবে। তখন অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগেও সবাই আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
এদিকে ব্যবসায় মন্দার প্রভাব পড়েছে আবাসন খাতের একমাত্র তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ারের দরে। গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ শেয়ারের দরে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সপ্তাহের শুরুতে এ শেয়ারের দর ছিল ৬৩ টাকা ৯০ পয়সা, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়ায় ৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়। এক সপ্তাহে শেয়ারটি দর হারায় ১০ শতাংশেরও বেশি।
রিহ্যাব সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে ছোট পরিসরে শুরু হলেও আবাসন খাত জাতীয় অর্থনীতির একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এ ব্যবসার সিংহভাগ রিহ্যাব সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ করলেও এর বাইরে আছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে সংগঠনটির সদস্যসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০, দুই বছর
আগেও যা ছিল ৫০০-এর মতো। রিহ্যাবের বাইরে কতটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আছে, তা জানেন না রিহ্যাব নেতারা। ধারণা করা হয়, এর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
সংগঠনটির দাবি, আবাসন খাত জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখছে। সিমেন্ট, রড, বালু, অ্যালুমিনিয়ামসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এক লাখ দক্ষ কর্মীর পাশাপাশি কয়েক লাখ অদক্ষ শ্রমিক এ খাতে কাজ করেন।

দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত

Leave a Reply