কনডেনসেট আমদানির সুযোগ পাচ্ছে বেসরকারি রিফাইনারি আপত্তি বিপিসির
খনি থেকে উত্তোলিত গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট আমদানির জন্য নীতিমালা করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর জন্য কনডেনসেট আমদানির সুযোগ রেখে এরই মধ্যে একটি খসড়া নীতিমালাও তৈরি করেছে জ্বালানি বিভাগ। তবে এ খসড়া নীতিমালা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পেট্রোলিয়াম রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিআরএবি)। তারা বলছে, খসড়া নীতিমালা যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে ছোট রিফাইনারিগুলো কনডেনসেট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আরো বৈষম্যের শিকার হবে। অন্যদিকে কনডেনসেট আমদানি উন্মুক্ত করার বিপক্ষে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তারা বলছে, কনডেনসেট আমদানি হলে দেশে জ্বালানি তেলে ভেজালের সুযোগ বেড়ে যাবে।
কনডেনসেট আমদানির খসড়া নীতিমালার ৬-এর (খ)-তে বলা হয়েছে, কনডেনসেট আমদানি করতে চাইলে প্ল্যান্ট মালিকদের ৩০ হাজার টনের সংরক্ষণাগার বা স্টোরেজ ট্যাংক ও পণ্য আমদানির জন্য জেটি থাকতে হবে। দেশে যেসব প্রতিষ্ঠান কনডেনসেট দিয়ে জ্বালানি উৎপাদন করে, তাদের মধ্যে মাত্র দুটি কোম্পানির এ সক্ষমতা রয়েছে।
এ নীতিমালার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে গত মাসে জ্বালানি বিভাগে চিঠি দিয়েছে পেট্রোলিয়াম রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। তারা বলছে, দেশে উৎপাদিত কনডেনসেটের প্রায় অর্ধেকই সরবরাহ করা হয় বড় দুই কোম্পানিকে। আবার তাদের জন্যই আমদানির সুযোগ রেখে নীতিমালা করা হচ্ছে। যদিও অন্য রিফাইনারিগুলো দীর্ঘদিন থেকে কনডেনসেট আমদানির সুযোগ চেয়ে আবেদন করে আসছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ২০টি রিফাইনারি রয়েছে। এর মধ্যে সাতটি সরকারি আর ১৩টি বেসরকারি। দেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার ব্যারেল কনডেনসেট পাওয়া যায়। সরকারি রিফাইনারিগুলোয় প্রতিদিন ছয় হাজার ব্যারেল কনডেনসেট বরাদ্দ দেয়া হয়। বাকি ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার ব্যারেল কনডেনসেট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে সুপার পেট্রোকেমিক্যাল ও পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারিকে দৈনিক ২ হাজার ২৫০ ব্যারেল করে মোট সাড়ে চার হাজার ব্যারেল কনডেনসেট সরবরাহ করা হয়। বাকি দেড় থেকে দুই হাজার ব্যারেল অন্য ১১টি রিফাইনারির মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানকে বেশি সরবরাহের পেছনে জ্বালানি বিভাগের যুক্তি হলো, তারা অকটেন উৎপাদন করে।
কনডেনসেট বরাদ্দে এমন বৈষম্য নিয়ে অন্য বেসরকারি রিফাইনারিগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে আসছে। তাদের দাবি, মন্ত্রণালয়, পেট্রোবাংলা ও বিপিসির একটি চক্র অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে দুই রিফাইনারিকে বাড়তি বরাদ্দ দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকেও আলোচনা হয়।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি কনডেনসেট আমদানি উন্মুক্ত করার বিপক্ষে। প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, কনডেনসেট গ্যাসক্ষেত্রের উপজাত। এ উপজাত থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি তেলের গ্রেড কম। লো-গ্রেডের এ তেল ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকর। মান ভালো না হওয়ায় এ তেল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা যায় না। আবার আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চেয়ে বাড়তি দামে দেশীয় রিফাইনারিগুলো থেকে নিম্নমানের এ তেল কিনতে হয় বিপিসিকে, যা বিপিসির লোকসানের একটি কারণ। এখন কনডেনসেটের আমদানি উন্মুক্ত করে দিলে দেশে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বাড়বে এবং বিপিসিকেই সেই তেল কিনতে হবে। কারণ নীতিমালা অনুসারে এ পণ্য কিনতে বিপিসি বাধ্য। এতে বিপিসির লোকসান আরো বাড়বে।
উল্লেখ্য, বেসরকারি রিফাইনারিগুলোর বিরুদ্ধে জ্বালানি তেলে ভেজাল দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিপিসির এক তদন্তে ১৩টি বেসরকারি রিফাইনারির ১১টিই তেলে ভেজাল দেয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ভেজালের অভিযোগে চার রিফাইনারিতে এক বছর কনডেনসেট সরবরাহ বন্ধও রাখা হয়। গত বছর এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত রিফাইনারিগুলো দাবি করে আসছে, অন্যায়ভাবে তাদের এ শাস্তি দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply