১৬ প্রকল্পের ৭৩ গাড়ি জমা দেয়নি বন অধিদফতর
জেসমিন মলি | ২০১৫-১২-২৯ ইং
উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে প্রকল্প শেষ হলেও নির্ধারিত গাড়ি জমা দেয়নি বন অধিদফতর। এ রকম ১৬টি প্রকল্পের ৭৩টি গাড়ি প্রাধিকারের বাইরে গিয়ে ব্যবহার করছেন বন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদফতরের ১৬টি প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ধরনের ৭৩টি গাড়ি কেনা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। তবে গাড়িগুলো জমা দেয়া হয়নি। সম্প্রতি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে বন অধিদফতরের সমাপ্ত প্রকল্পের যানবাহন-সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
জানতে চাইলে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বণিক বার্তাকে বলেন, সব মন্ত্রণালয়েই গাড়ি জমা না দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এটা দুঃখজনক ব্যাপার। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে মন্ত্রণালয়গুলোয় পর্যাপ্ত পরিবহন না থাকার কারণে। এগুলো নিয়ে শুধু আলোচনাই হয়; কোনো সমাধান হয় না। আমার মন্ত্রণালয়েও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের দায়িত্ব, প্রকল্প শেষ হলে গাড়িগুলো ফেরত নেয়া। তারা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মন্ত্রণালয়ে গাড়ি সংকট রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন প্রকল্পে যেসব গাড়ি কেনা হয়, তা প্রকল্প শেষ হলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবহন পুলে জমা না দিয়ে কর্মকর্তারা নিজেরা ব্যবহার করেন।
যেসব প্রকল্পের গাড়ি ফেরত দেয়া হয়নি, সেগুলোর মধ্যে রামগড় সীতাকুণ্ড এলাকায় পাহাড়ে বনায়নের একটি প্রকল্পে কেনা হয় একটি জিপ ও একটি পিকআপ। জিপটি বন সংরক্ষক চট্টগ্রাম অঞ্চলে ব্যবহার করা হচ্ছে। পিকআপটি চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে ব্যবহার হচ্ছে। মধুপুর জাতীয় উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পে কেনা হয় একটি জিপ ও একটি পিকআপ। জিপটি উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীতে ব্যবহার হচ্ছে আর পিকআপটি চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পে কেনা হয় দুটি জিপ ও তিনটি পিকআপ। একটি জিপ আইপিএসি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হচ্ছে এবং অন্য জিপটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতরে ব্যবহার হচ্ছে।
বন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী প্রকল্পের অধীন ১০টি জিপ কেনা হয় আর পিকআপের সংস্থান ছিল আটটি। জিপগুলোর মধ্যে সচল ছয়টি আর চারটি মেরামতযোগ্য। বিধি অনুযায়ী, সচল গাড়ি পরিবহন পুলে জমা দেয়ার কথা এবং অচল গাড়ি নিলামে তুলে অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে হবে। অথচ এর কোনোটিই করা হয়নি। গাড়িগুলো বন অধিদফতরের কর্মকর্তারা ব্যবহার করছেন। পিকআপের তিনটি সচল থাকলেও মেরামত করতে হবে পাঁচটি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অশ্রেণীভুক্ত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বনায়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পে দুটি পিকআপ কেনা হয়। পার্বত্য জেলাগুলোয় বন বিভাগে অবকাঠামো সংস্কার ও সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্পে রয়েছে দুটি পিকআপ। ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক প্রকল্পে জিপ কেনা হয় একটি আর পিকআপ একটি। বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক স্থাপন, সীতাকুণ্ড প্রকল্পে কেনা হয় একটি করে পিকআপ। বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর গাইড বাঁধ এলাকায় সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে কেনা হয় একটি জিপ। মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক স্থাপনে একটি পিকআপ, বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন ইন দ্য সুন্দরবন রিজার্ভ ফরেস্ট প্রকল্পে ছয়টি জিপ, একটি মাইক্রোবাস, দুটি পিকআপ কেনা হয়।
ফরেস্ট্রি সেক্টর নামে একটি প্রকল্পে কেনা হয় ১০টি জিপ ও ১৩টি পিকআপ, ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, কক্সবাজার দ্বিতীয় পর্যায়ের উন্নয়নকাজে কেনা হয় একটি পিকআপ ও দুটি মিনিবাস। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে কেনা হয় একটি পিকআপ।
সাফারি জিপ কেনা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের উন্নয়ন কাজে। জিপটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে ব্যবহার করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৬০ দিন) প্রকল্পের যানবাহন পরিবহন পুলে জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/মন্ত্রণালয় প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে অন্য কেউ দায়ী হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া অডিট আপত্তির বিষয়টি রুলস অব বিজনেস অনুসারে আর্থিক বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য অর্থ বিভাগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে গাড়ি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে যদি কেউ এ বিধান না মানে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো এখতিয়ার নেই এ মন্ত্রণালয়ের। এ কারণে জনপ্রশাসন থেকে একাধিকবার তাগাদা দেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রকল্পের আওতায় ব্যবহূত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও জ্বালানির সংস্থান অন্য প্রকল্প থেকে করা হয়। এ কারণে প্রকল্পের গাড়ি নিতে অনেক কর্মকর্তা আগ্রহী থাকেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের দামি গাড়িগুলো প্রকল্প পরিচালক ব্যবহারের সুযোগ পান না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালীদের ব্যবহারের জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়।
Leave a Reply