মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প অসম প্রতিযোগিতায় বাজার দখলে পিছিয়ে

জেসমিন মলি | ২০১৫-১০-০৪ ইং

www.bonikbarta.comআমদানি করা পাথরের চেয়ে গুণগত মান ভালো— বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য থেকে মান পরীক্ষায় মিলেছে এ সনদ। কিন্তু উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় পাথর বিক্রিতে অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি। এ প্রতিযোগিতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে শুল্কমুক্ত পাথর আমদানির সুযোগ।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়ার পাথর উৎপাদন হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট গভীরতায় শিলাস্তর থেকে। এতে ব্যবহার করা হয় ভারী যন্ত্রপাতি, বিস্ফোরক ও আধুনিক প্রযুক্তি। পাথর বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটির যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়, তাদের পাথর সংগৃহীত হয় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ, নদীর পাড়, পাহাড়ের পাদদেশ অথবা ভূপৃষ্ঠের ৫-১০ ফুট নিচ থেকে। এ কারণে তাদের পাথরের দাম তুলনামূলক কম।

একই সঙ্গে অধিক পরিবহন ব্যয়ের কারণেও মধ্যপাড়ার পাথরের দাম বেশি পড়ে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেগা প্রজেক্টগুলোর অবস্থান খনি থেকে দূরে হওয়ায় পরিবহন ব্যয় বেশি হচ্ছে। মৌসুমভেদে সড়কপথে পরিবহন ব্যয়ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। খনি পর্যন্ত রেললাইন থাকলেও পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ও ওয়াগনের অভাবে রেলপথে পাথর পরিবহন কম হয়।

শুল্কমুক্ত পাথর আমদানির কারণেও প্রতিষ্ঠানটি বাজারে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। পদ্মা সেতু ও অন্য মেগা প্রজেক্টের জন্য শুল্কমুক্ত পাথর আমদানি হচ্ছে। এতে মধ্যপাড়া থেকে উত্তোলিত পাথরের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে।

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত পাথর আমদানির বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। তবে খনি থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু ২০০৮ সালে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পাথর উৎপাদন বাড়াতে বেলারুশভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানি জিটিসির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। বর্তমানে খনির দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৫০০ টন। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মজুদ হয়েছে ৬ লাখ ৪০ হাজার টন পাথর। বর্তমানে যে হারে পাথর বিক্রি হচ্ছে, তাতে এ মজুদ শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগবে। প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৩০১ কোটি টাকার পাথর বিক্রি করা হয়েছে। এ সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাথর বিক্রি বাড়াতে মধ্যপাড়া গ্রানাইট কোম্পানি বিভিন্ন সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানি, বড়পুকুরিয়া থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কক্সবাজার এয়ারপোর্ট অথরিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে তারা। এ তালিকায় আরো রয়েছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন সিমেন্ট ফ্যাক্টরি।

প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যয় কমিয়ে আনতে রেলের মাধ্যমে পাথর পরিবহন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মধ্যপাড়া থেকে উত্তোলিত পাথর ব্যবহারের জন্য রেলওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবহনের জন্য হপার টাইপ ওয়াগন ও লোকোমোটিভ বরাদ্দের লক্ষ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে রেলওয়ে ওয়াগন বরাদ্দের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধাসরকারি) পাঠানো হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, সরকারি বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর সরবরাহ করা হচ্ছে। এ খনিতে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টন পাথর রয়েছে। বর্তমানে খনিটি থেকে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ১২ লাখ টন। যদিও উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ১৬ লাখ টনের বেশি।

উল্লেখ্য, মধ্যপাড়া খনিতে শূন্য থেকে পাঁচ মিলিমিটার আকারের প্রতি টন পাথরের দাম ৫ ডলার। ৫-২০ মিলিমিটার আকার পর্যন্ত ২৬ ডলার, ২০-৪০ এবং ৪০-৬০ মিলিমিটার আকার পর্যন্ত ২৩ ডলার, ৬০-৮০ মিলিমিটার ২২ ডলার এবং ৮০-৩০০ মিলিমিটার আকারের প্রতি টন পাথরের দাম ২০ ডলার। সেই সঙ্গে প্রতি টন পাথরের দামের সঙ্গে মূল্যসংযোজন কর (মূসক) দশমিক ৯ ডলার যুক্ত হয়। তবে ভারত বা ভুটান থেকে পাথর আমদানিতে খরচ কম পড়ে।

Leave a Reply