নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্য থেকে অনেক পিছিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ

জেসমিন মলি | ২০১৫-০৯-২৮ ইং

www.bonikbarta.comচলতি বছর নাগাদ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সেভাবে সাফল্য আসেনি।

জানা গেছে, গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল ও নিউক্লিয়ার এনার্জির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১২ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। নীতিমালায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল উৎস হিসেবে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়ো ফুয়েল, জিও থার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি নীতিমালায় অন্যান্য সুযোগও রাখা হয়েছে। এতসব উদ্যোগের পরও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাফল্য না এলেও এ খাতে প্রায় ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার বিভিন্ন প্রকল্প বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আরো প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষম প্রকল্প পরিকল্পনাধীন রয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে।

২০১০ সালে বিদ্যুৎ সেক্টরের জন্য সরকারের গৃহীত মহাপরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির আলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫ শতাংশ ও ২০২০ সালের মধ্যে মোট উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য খাত থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ৮০০ মেগাওয়াট ও ২০২০ সালের মধ্যে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত এ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ শতাংশ অর্জন সম্ভব হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে সৌরশক্তি থেকে ৫০০ মেগাওয়াট, বায়ুশক্তি থেকে ১৫, বায়োমাস ও বায়োগ্যাস থেকে ১০, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২৫০ ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেই কিছুটা সাফল্য দেখা গেছে। বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ এখন পর্যন্ত উইন্ড ম্যাপিংয়েই থেমে আছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন কোনো সাফল্য নেই।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রতিবেদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের অর্জন নিয়ে বলা হয়েছে, ৫০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে রোডম্যাপ, ১৬০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু ও ১২টি স্থানে উইন্ড ম্যাপিংয়ের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের মধ্যে ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বর্তমানে এমন হোম সিস্টেম রয়েছে ৩৬ লাখ। ১৯৩টি সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ডিজেলচালিত সব সেচ পাম্পকে সোলার সেচ পাম্পে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ছয়টি মিনি গ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালের মধ্যে ৫০টি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হলেও সরকারি ও সাহায্য সংস্থার আন্তরিকতার অভাবের কথা বলেছেন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ-সংশ্লিষ্টরাই। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় সৌরশক্তির ওপর। এ খাতের প্রকল্পে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতা করার কথা থাকলেও সরকার সে সহযোগিতা পায়নি। নিজস্ব অর্থায়ন, দাতা সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থায়নের চেষ্টাও সফল হয়নি। এছাড়া বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনার কথা শোনা গেছে। দেশের সব সরকারি অফিসে সোলার প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও তাতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি।

বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে সৌরচালিত সেচ পাম্পে ১০ মেগাওয়াট, মিনি গ্রিড সিস্টেমে ২ দশমিক ২, সোলার রুফটপ থেকে ২, সোলার স্ট্রিট লাইট থেকে ১ ও সরকারি জমিতে সোলার পার্কের মাধ্যমে ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন।

এছাড়া বায়ুশক্তি থেকে ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সমুদ্রতীরবর্তী ১৩টি এলাকায় ৮৫ মিটার উচ্চতার টাওয়ার স্থাপন করে উইন্ড ম্যাপিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব এলাকা হলো ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, কুড়িগ্রাম, আনোয়ারা, ইনানী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, চাঁদপুর, রাজশাহী, গাইবান্ধা ও কুয়াকাটা। এর মধ্যে ফেনী ও কক্সবাজারে উইন্ড ম্যাপিং শেষ হয়েছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। উইন্ড ম্যাপিং শেষ হলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যেগে এসব স্থানে বায়ুবিদ্যুেকন্দ্র স্থাপনের সুযোগ উন্মোচন হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।

Leave a Reply