নগরের গৃহহীন মানুষের জন্য সীমিত উদ্যোগ

জেসমিন মলি | ২০১৫-১০-০৫ ইং

নগর গবেষণা কেন্দ্রের এক গবেষণায় বলা আছে, রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৪ শতাংশেরই আবাসনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সরকার গ্রামীণ জনপদের দরিদ্র মানুষের নানা সুযোগ-সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিলেও, নগর দরিদ্রদের আবাসন সুযোগ বাড়ানোয় সে অর্থে কোনো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি এখনো। এমনকি সাফল্যের মুখ দেখেনি বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় বেশকিছু এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড় জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। ঘনবসতিপূর্ণ এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রচলিত আবাসন সুবিধার বাইরে আছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সুবিধাবঞ্চিত এসব মানুষের মধ্যে আবার নামমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ জনগণের।

ঢাকার মোট ৪৪ শতাংশ গৃহহীন জনগণের মধ্যে ৩৫ শতাংশ বিভিন্ন বস্তিতে বাস করলেও; ভাসমান অবস্থায় রাস্তার ধারে, রেললাইন, পার্কসহ বিভিন্ন খোলা জায়গায় বাস করে প্রায় ৮-৯ শতাংশ মানুষ।

দেশে গৃহহীন মানুষের সংখ্যা নিয়ে সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি এখনো। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার গবেষণায় দেখা যায়, সারা দেশে গৃহহীনের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ। এদের ৫০ লাখেরই বাস রাজধানী ঢাকায়। অন্যদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ বস্তিশুমারি ও ভাসমান লোকগণনা অনুযায়ী দেশে বস্তিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আবাসন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় রাজধানীর ভাসমান ও গৃহহীন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত করা না গেলে এগুলো থেকে তেমন কোনো সুফল আসবে না। নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের দিয়ে এ কাজগুলো করিয়ে নিতে হবে সরকারকেই।

১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ পালন করা হয় অক্টোবরের প্রথম সোমবার। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও আজ পালন করা হচ্ছে দিবসটি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সবার জন্য সার্বজনীন এলাকা’।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দ্রুত নগরায়ণের কারণে খোলা জায়গার পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। বাস্তুসংস্থান, পরিবেশ ও সমাজতাত্ত্বিক বিষয়গুলোর প্রতি সচেনতা ও উদ্যোগের অভাব এবং অসংবেদনশীল সরকারি ও বেসরকারি খাতের কারণে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে নগরীর খোলা এলাকা ও জলাশয়। যেগুলো এখনো টিকে আছে, দ্রুত ব্যবহার যোগ্যতা হারাচ্ছে সেগুলোও।

সাধারণত একটি আদর্শ নগরীতে খোলা জায়গার পরিমাণ ধরা হয় ২৫ শতাংশ।

১৯৯৫ সালে গৃহীত ঢাকা নগরীর স্ট্রাকচার প্ল্যানে (ডিএমডিপি ১৯৯৫) দেখা গেছে, ওই সময়ে সবুজ ও খোলা এলাকার পরিমাণ ছিল পুরান ঢাকায় ৫ এবং নতুন ঢাকায় ১২ শতাংশ। পরিকল্পনায় ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য খোলা এলাকার পরিমাণ বরাদ্দ করা হয় ২০ শতাংশ। কিন্তু এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো কার্যক্রম নেয়া হয়নি কখনোই। সরকারি ও বেসরকারিভাবে দখলের ফলে নিয়মিত হারে হ্রাস পাচ্ছে খোলা ও সবুজ এলাকার পরিমাণ। ঢাকা শহর কাঠামো পরিকল্পনায় (১৯৯৫-২০১৫) রাজধানীর উম্মুক্ত স্থান-সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নীতিমালার উল্লেখ থাকলেও, এ বিষয়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনোই।

আগামী বছর থেকে বাস্তবায়নযোগ্য ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানে (২০১৬-২০৩৫) বলা হয়, বর্তমানে নগরীর আবাসনের চাহিদা ৭ লাখ ৬০ হাজার ইউনিট। ২০৩৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ লাখ ৬০ হাজার ইউনিটে। অতিরিক্ত ৫ লাখ ইউনিটের গৃহায়ণের জন্য পরিকল্পিত ও কম ব্যয়ে (লো-কস্ট) আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। জমির চাহিদা মেটানোর জন্য ঢাকা মহানগরী ঘিরে গাজীপুর সদর উপজেলা, রূপগঞ্জ ও কালীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর ও সোনারগাঁ, কেরানীগঞ্জ এবং সাভার— এ পাঁচটি অঞ্চলের উন্নয়ন করতে হবে। পাশাপাশি লালবাগের কেন্দ্রীয় কারাগার ও হাজারীবাগের ট্যানারিকে স্থানান্তরের মাধ্যমে খালি করা জমি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কম ব্যয়ের আবাসন সুবিধা দিতে না পারলে বস্তির সংখ্যা বাড়বে বলেও পরিকল্পনায় সতর্ক করা হয়।

Leave a Reply