জিডিপিতে আবাসন খাতের অবদান কমছে

জেসমিন মলি | ২০১৫-০৭-২২ ইং

আবাসন খাতের দুরবস্থার প্রভাব পড়েছে মোট দেশজ উত্পাদনেও (জিডিপি)। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ছিল ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। অর্থাত্ এক দশকে এ খাত থেকে জিডিপিতে অবদান কমেছে ১ শতাংশেরও বেশি। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আবাসন খাতের অবস্থা খারাপ যাচ্ছে। এ খাতকে গতিশীল করতে সেভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জমি এবং নির্মাণসামগ্রীর দামের কারণে ফ্ল্যাটের বিক্রিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। যার প্রভাব পড়ছে জিডিপিতে।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল অবকাঠামো, দুর্নীতি, জ্বালানি স্বল্পতা, অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ধীরগতি সত্ত্বেও জিডিপি ৬ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরেও বৈশ্বিক মন্দার ফলেও আবাসন খাত তার প্রবৃদ্ধির একটি মাত্রা ধরে রেখেছিল। তবে নীতিনির্ধারকদের অপর্যাপ্ত উদ্যোগের ফলে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে জিডিপিতে।

রিহ্যাব সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে আবাসন খাতকে ঘিরে ২০ লাখের মতো কর্মসংস্থান ছিল। ২০১৪ সালে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ লাখের মতো। ২০২০ সাল নাগাদ এ খাতে প্রায় ৩৩ লাখ কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো না যাওয়ায় এ খাতে উদ্যোগ গ্রহণের সংখ্যা কমছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যেসব শহর খুব দ্রুত বর্ধনশীল সেখানে রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির দাম বাড়তে থাকে। দাম বাড়তির দিকে থাকলে কৃত্রিমভাবেও দাম বাড়ানো হয়। তখন অনেক ব্যবসায়ী এ খাতে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন। ২০০৯ সালের পর দেশে আবাসন খাতের চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুন ডেভেলপার এ খাতে ব্যবসা শুরু করেন।

আবাসন ব্যাবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের তথ্যমতে, ১০ বছর আগে সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫০। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০০। একসময় আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় বাড়তে থাকে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা। ক্রেতা আকর্ষণে দাম কমানো হলেও পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়নি।

২০১৪ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের পরিমাণ ১০ হাজার ৬০০টি। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১২৪টি। অর্থাত্ অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা আড়াই গুণ বেড়েছে। আর ২০১২ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৮৪টি। অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রিহ্যাব সদস্যদের বিক্রিও কমেছে। ২০১৪ সালে ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৪৭৭টি। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৬৩টি। অর্থাত্ ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে ২১ শতাংশ। আর ২০১২ সালে আবাসন ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পেরেছিলেন ২ হাজার ২৯৩টি ফ্ল্যাট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসবের প্রভাব পড়েছে জিডিপিতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রহণযোগ্য সুদে আবাসন খাতে ঋণ না পাওয়ায় এ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহীদের মতে আরো কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতারণা, প্রতিশ্রুতি পূরণে কোম্পানিগুলোর ব্যর্থতা ও অতিরিক্ত মূল্য অন্যতম।

ঢাকার সেগুনবাগিচার এক সরকারি কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ খান বলেন, বাড়িওয়ালার নানা অনুশাসনের কারণে সবাই নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে চান। কিন্তু অনেকেরই তার সামর্থ্য নেই। তিনি বলেন, ‘বিদেশে ঋণের সুদ কম, ফ্ল্যাট ও বাড়ির দাম যৌক্তিক। এ কারণে ভাড়ার টাকার সঙ্গে অল্প কিছু যোগ করে ঋণের মাসিক কিস্তি দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। কিন্তু এ দেশে তা সম্ভব নয়।

ঢাকা শহরে ফ্ল্যাটের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক স্বল্প ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠী ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করতে সমর্থ হন না। বাড়তি দামের কারণে ক্রমেই আবাসন শিল্প ঢাকার বাইরে স্থানান্তরিত হচ্ছে। রিয়েল এস্টেট প্রপার্টির কেনাবেচা বিষয়ক ওয়েবসাইট লামুডির এক গবেষণায় আবাসনে চাহিদার পরবর্তী গন্তব্য উত্তরা বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অবস্থানগত দিক বিবেচনায় উত্তরার স্যাটেলাইট টাউনের প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ থাকবে সর্বাগ্রে। উচ্চবিত্তদের বসবাসের স্থান হিসেবে পরিচিত গুলশান রয়েছে পরবর্তী তালিকায়। বসুন্ধরা বারিধারার খোলা জায়গা এবং সুযোগ-সুবিধার কারণে এটি রয়েছে তালিকার তৃতীয় স্থানে।

রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি এবং স্ট্রাকচারার ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (এসইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আব্দুল আউয়াল বণিক বার্তাকে জানান, গত কয়েক বছর ধরেই আবাসন ব্যবসা ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাধারণত বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে যেতে চান না। তবে এখন অনেকেই ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। এটি আবাসন খাতের ব্যবসার জন্য খুবই ইতিবাচক। নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ঢাকার বাইরে প্রচলিত হলে এ খাতের ব্যবসা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

Leave a Reply