গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য ঢাকা ও মুম্বাইয়ে ফ্ল্যাটের মূল্য সমান

নিজস্ব প্রতিবেদক | ২০১৫-১০-০৪ ইং

রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের যে দাম, তার সমপরিমাণ অর্থ গুনতে হয় মুম্বাই শহরেও। অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাটের চড়া মূল্যের কারণে এরই মধ্যে মুম্বাই বিশ্বের ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় প্রবেশ করেছে। একই পথে হাঁটছে ঢাকাও। তবে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম এখনো যৌক্তিক।

রাজধানীর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ঢাকার আবাসন বাজার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকা শহরে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কিনতে চাচ্ছেন এ রকম ১০০ ক্রেতার ওপর একটি জরিপ চালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির রিয়েল এস্টেট বিভাগ। আবাসন ক্রেতাদের প্রত্যাশা ও পরিতৃপ্তি পরিমাপ করতে এ জরিপ চালানো হয়। ‘কাস্টমার স্যাটিসফেকশন অব রিয়েল এস্টেট বায়ারস অব ঢাকা সিটি— এ সার্ভে অন কাস্টমার পারসেপশন অ্যান্ড এক্সপেক্টেশন’ শীর্ষক এ গবেষণায় ফ্ল্যাটের দাম, আকার, অবস্থান, সুযোগ-সুবিধাসহ ক্রেতাদের আগ্রহের নানা বিষয় উঠে এসেছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রিয়েল এস্টেট বিভাগের পরামর্শক ড. মোস্তফা কামাল এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আবাসন খাতে মন্দাভাব চলছে অনেক দিন ধরেই। ক্রেতারা কেন ফ্ল্যাট বা প্লটে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে না, বিষয়টি জানতেই মূলত এ গবেষণা করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে ঢাকার গুলশান, বারিধারা, বনানী ও ধানমন্ডির মতো বনেদি এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে প্রতি বর্গফুটের জন্য ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। ভারতের প্রধান বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়েও প্রতি বর্গফুট আবাসনের দাম একই সমান।

মুম্বাইয়ের বনেদি এলাকা আন্ধেরি, বান্দ্রা ওয়েস্ট ও গোরেগাঁওতে ফ্ল্যাট কিনতে হলে প্রতি বর্গফুটে ৮ থেকে ২১ হাজার রুপি পর্যন্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়। শহরের মধ্যাঞ্চল ও নতুন মুম্বাইয়ে বাড়ির দাম আরো কম। শুধু দক্ষিণ মুম্বাইয়ের কোলাবা, কাফি প্যারেড ও তারদেও এলাকায় ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম ঢাকার চেয়ে বেশি।

অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ড. মোস্তফা কামাল বলেন, অভিজাত এলাকায় একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের কাছে দামের চেয়ে প্রতিবেশীরা মুখ্য। এ কারণে এসব এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম বেশি হয়ে থাকে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ৩৫-৪৫ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটে ক্রেতাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। সর্বোচ্চ ৪৮ শতাংশ ক্রেতার আগ্রহ রয়েছে এ ধরনের ফ্ল্যাটের প্রতি। ২৫ শতাংশ ক্রেতা ৪৫-৫৫ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী। আর ৫৫ লাখ টাকার বেশি দামের ফ্ল্যাট কিনতে ইচ্ছুক মাত্র ২০ শতাংশ ক্রেতা। দেখা যায়, আবাসন খাতের ৫৭ শতাংশ ক্রেতা ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী আর অবশিষ্ট ৪৩ শতাংশের আগ্রহ প্লটে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীতে ফ্ল্যাট-প্লটের চাহিদা থাকলেও দামের কারণে ক্রেতারা এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না। চড়া দামের কারণে ফ্ল্যাট না কিনে ভাড়া বাসায় থাকতেই অনেকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

ধানমন্ডিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন সোহেল চৌধুরী। তিনি বলেন, বাড়িওয়ালার নানা অনুশাসনের কারণে সবাই নিজের ফ্ল্যাটে থাকতে চায়। কিন্তু অনেকেরই সে সামর্থ্য নেই। বিদেশে ঋণের সুদ কম, ফ্ল্যাট ও বাড়ির দামও যৌক্তিক। এ কারণে ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিংবা বাড়ি কিনলে ভাড়ার টাকার সঙ্গে অল্প কিছু যোগ করে ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধ করে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। কিন্তু দেশে এটা সম্ভব নয়। কারণ ফ্ল্যাটের দাম ও ঋণের সুদ এখানে আকাশছোঁয়া। এ কারণে অস্বাভাবিক আয় না থাকলে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী নয় বেশির ভাগ মানুষ।

ফ্ল্যাট কিনতে ইচ্ছুক ক্রেতারা জানান, আবাসন ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার কারণেই ফ্ল্যাটের দাম বেশি। আর আবাসন ব্যবসায়ীরা বলেন, জমির দাম বেশি হওয়াতেই ফ্ল্যাটের দাম বেশি।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন জানান, রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম এখনো যৌক্তিক। দাম কমিয়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি অর্জন কঠিনই। ব্যবসায় মন্দাভাবের কারণে আমরা দাম অনেক কমিয়েছি। জমি ও নির্মাণসামগ্রীর বাড়তি দামের কারণে ফ্ল্যাটের দাম বেশি পড়ে যায়। নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবাসন খাতে সহনীয় সুদহারে ঋণ না পাওয়ায় এ খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহীদের মতে, এর পেছনে আরো কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রতারণা, প্রতিশ্রুতি পূরণে কোম্পানিগুলোর কার্পণ্য ও অতিরিক্ত মূল্য অন্যতম।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যেসব শহর দ্রুত বর্ধনশীল, সেখানে আবাসন সম্পত্তির মূল্য বাড়তে থাকে। এরই সমান্তরালে কৃত্রিমভাবেও দাম বাড়ানো হয়। তখন অনেক ব্যবসায়ী এ খাতে আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন। ২০০৯ সালের পর দেশে আবাসন খাতের চাহিদা বাড়তে থাকায় নতুন অনেক ডেভেলপার এ খাতে ব্যবসা শুরু করেন।

রিহ্যাব সূত্র বলছে, ১০ বছর আগে সংগঠনটির সদস্য ছিল দেড়শ। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০০। এ খাতের আকার বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে সংকটও। ২০১৪ সালে অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা ১০ হাজার ৬০০টি। ২০১৩ সালে অবিক্রীত ছিল ৪ হাজার ১২৪টি ফ্ল্যাট। অর্থাৎ অবিক্রীত ফ্ল্যাটের সংখ্যা এক বছরে আড়াই গুণ বেড়েছে।

Leave a Reply