আইএমইডির ৫৩০ প্রকল্প পরিদর্শন অনিয়ম বন্ধে সুপারিশ বাস্তবায়নে অনীহা মন্ত্রণালয়ের

জেসমিন মলি | ২০১৫-০৯-১৫ ইং

www.bonikbarta.comপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগ (আইএমইডি) গত অর্থবছর ৩৪টি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার প্রায় ৫৩০টি প্রকল্প পরিদর্শন করে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের প্রমাণও পায় সংস্থাটি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দফতরে পাঠানো হয়। তবে গুটিকয়েক মন্ত্রণালয় সেসব সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করলেও অধিকাংশ মন্ত্রণালয় এসব অনিয়মের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের এক বৈঠকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

জানা গেছে, আইএমইডি বিভিন্ন সময় প্রকল্প পরিদর্শন করে সুপারিশমালা দিয়ে থাকে। তবে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। আইএমইডি পরিদর্শন প্রতিবেদনের সুপারিশমালার গুরুত্ব বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রয়োজনে আইএমইডির সচিব ও পরিকল্পনামন্ত্রী পরিদর্শনের সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সচিবের কাছে আধা সরকারি (ডিও) পত্র পাঠান।

জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বণিক বার্তাকে বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা নেই কথাটি সত্য। তবে আইএমইডির সুপারিশ যাতে বাস্তবায়ন করা হয়, সেজন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের টেকসই উন্নয়ন হবে।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সর্বাধিক ৯২টি প্রকল্প পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও তার জবাব দেয়া হয়নি বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ৩৬টি প্রকল্প পরিদর্শনের পর আটটি সুপারিশ করা হয়। এসবের মধ্যে ছিল দেশে ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা। গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প গ্রহণের আগে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে অর্থনৈতিক ও কারিগরি বিশ্লেষণ সতর্কতার সঙ্গে করতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বলা হয়। কূপ খননের ক্ষেত্রে বাপেক্সের রিগের স্বল্পতা, বিভিন্ন গ্যাসফিল্ডের অগ্রাধিকার রিগের শিডিউল প্রভৃতি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

আইএমইডি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি উচ্চপর্যায়ের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে খনন কার্যক্রম স্থগিতকৃত ফেঞ্চুগঞ্জ ৫ নং কূপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে বলে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে প্রকল্পে ডিপিপি অনুমোদন স্বল্প সময়ে করারও সুপারিশ করে। এ বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও কাজের ত্রুটি এবং জেটি নির্মাণে সর্বনিম্ন দরদাতার দর আরডিপিপি মূল্য অপেক্ষা বেশি হওয়ায় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে কাজ  শেষ না হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও বলা হয়। তবে সুপারিশ-পরবর্তী ব্যবস্থা সম্পর্কে আইএমইডিকে জানানো হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের দ্বিতীয় সর্বাধিক ৯০টি প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়। এ বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধে বেশকিছু সুপারিশও করে আইএমইডি। এর মধ্যে রয়েছে— প্রকল্পের কাজ শেষ করতে যথাসময়ে বরাদ্দ প্রদান; অপেক্ষাকৃত বড় ও কারিগরি দিক বিবেচনায় জটিল যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে সমীক্ষার আলোকে বিনিয়োগ প্রকল্প গ্রহণ; সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ফিজিবিলিটি স্টাডির ক্ষেত্রে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বিস্তারিত ড্রয়িং ডিজাইন। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুমোদিত ডিপিপির খাতভিত্তিক বরাদ্দ অনুযায়ী ব্যয়ের পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণ, নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন ও তদারকিতে মানসম্পন্ন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের জন্য বলা হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রকল্প প্রণয়নের কথা বলা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগের অন্যান্য প্রকল্পে স্বচ্ছতার জন্য একগুচ্ছ সুপারিশমালা প্রস্তাব করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ কিছু সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি জানানো হয়নি বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, মহিলা ও শিশু বিষয়ক, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, সমাজকল্যাণ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু, রেলপথ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগসহ একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আইএমইডির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Leave a Reply