স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় দুদকের ‘ফাঁদ টিম’ স্থবির
জেসমিন মলি | ২০১৫-০৭-৩০ ইং
ঘুষসহ অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে উৎসস্থলে প্রতিরোধ করতে বিশেষ টিম গঠন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশেষ এ টিমের নাম দেয়া হয় ফাঁদ টিম। ২০১২ সালে একজন পরিচালকের অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে দলটি। কিন্তু স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় তেমন সাফল্য দেখাতে পারছে না এ টিম। গত তিন বছরে এ টিমের উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জন নেই।
জানা গেছে, তিন বছরে ফাঁদ টিম মাত্র ১২টি অভিযোগের বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে পাঁচটি, ২০১৩ সালে দুটি ও ২০১৪ সালে পাঁচটি ঘটনায় অভিযুক্তদের হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয় দলটি।
দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, একজন পরিচালকের অধীনে ফাঁদ টিমের কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা ছিল। তবে বেশির ভাগ সময় এ পদে দায়িত্ব পালন করেন প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বদলি হয়ে গেলে ফাঁদ টিমের কার্যক্রমও স্থবির হয়ে যায়।
দুদকের কমিশনার মো. সাহাবউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ঘুষসহ বিভিন্ন অবৈধ লেনদেনে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে বিশেষ দলটি। তাদের এ কাজে সহায়তা করে পুলিশ ও র্যাব। তবে অপরাধীকে প্রমাণসহ গ্রেফতার করা সহজ নয়। এ কারণে হয়তো এ টিমের কার্যক্রম দৃশ্যমান হয় না।
জানা গেছে, দুর্নীতির ঘটনা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করলেও সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকায় অনেক সময় অপরাধলব্ধ অর্থসহ অপরাধীকে ধরতে দুদক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বেশির ভাগ ঘটনায় ঘুষদাতা এবং ঘুষগ্রহীতা উভয়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকায় অপরাধীদের চিহ্নিত করা দুরূহ। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ ২০১২-এর আওতায় সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে এমন ফাঁদ পরিচালনা করলে কারো অভিযোগ ও সহযোগিতা ছাড়াই অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা যাবে বলে মনে করছে কমিশন।
দুদক কমিশনার আরো বলেন, দুদক বিভিন্ন দুর্নীতিপ্রবণ প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করে। কিন্তু সেখানে অবৈধ অর্থ লেনদেন বন্ধে ব্যবস্থা নিতে চাইলেও তা সম্ভব হয় না।
জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ধরতে ফাঁদ টিমের কাজে সহায়তা করে র্যাব ও পুলিশ বিভাগ। ঘুষপ্রবণতা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে এ টিম ভূমিকা রাখতে পারবে বলে কমিশন মনে করে। তবে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, আত্মসাৎ, মিথ্যা হিসাব বিবরণী প্রস্তুত, মানি লন্ডারিং, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন প্রভৃতি অপরাধের ধরন ও প্রকৃতির কারণেই এ অপরাধ সংঘটনকালে ধরা সহজসাধ্য হবে না। এছাড়া পরিদর্শন টিমের সঙ্গে অপরাধীদের আঁতাত গড়ে ওঠার আশঙ্কাও করেন কেউ কেউ।
দুদকের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তফসিলভুক্ত দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের হাতেনাতে ধরতে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা নির্বাচিত অথবা মনোনীত জনপ্রতিনিধি কোনো কাজের জন্য ঘুষ দাবি করলে, ঘুষ প্রদানের পূর্বেই তথ্যটি দুদকের প্রধান কার্যালয় অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে ঘুষ বা উেকাচ গ্রহণকারীকে ফাঁদ পেতে হাতেনাতে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু অপরাধের প্রকৃতি এবং দায়িত্বে স্থায়ী কর্মকর্তার অভাব— সব মিলিয়ে ফাঁদ টিম সেভাবে কার্যকর হতে পারছে না।
Leave a Reply