ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবন ব্যবস্থা নিতে পারছে না রাজউক
পাঁচ বছর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছিল রাজধানীর ৩২১টি ভবন। এসব ভবন ভেঙে ফেলতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনে চিঠিও পাঠানো হয়। কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ না থাকায় মালিকদের ভবন ভাঙার নির্দেশনা দেয় রাজউক। এতেও কাজ না হওয়ায় করণীয় নির্ধারণে চলতি বছরের শুরুর দিকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় সংস্থাটি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছে না রাজউক। সংস্থাটি বলেছে, এসব ভবনের বিষয়ে সরকার যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১ জুন তেজগাঁও পোস্ট অফিস গলির ১৮ নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচতলা বাড়িটি ধসে ২৫ জন নিহত ও অর্ধশত মানুষ আহত হয়। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরই রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে জরিপ চালায় রাজউক। জরিপে ৩২১টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরির পর সেগুলো ভাঙতে ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ডিসিসি) চিঠি পাঠায় রাজউক।
কিন্তু রাজউকের চিঠি আমলে নেননি ডিসিসি কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ডিসিসি বিভক্ত হওয়ার পরও ভবন ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেয়নি ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এর পর ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ, ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান ও ভেঙে ফেলার অনুরোধ জানিয়ে রাজউকে চিঠি পাঠায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপাতদৃষ্টিতে ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় বেশকিছু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ হলে তা ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। অন্যথা এসব ভবন ভেঙে ভয়াবহ বিপর্যয় ও জানমালের ক্ষতি হতে পারে। আপনার কর্মপরিধির আওতায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন নির্মাণ, পরবর্তী সময়ে ভবন ব্যবহার, সঠিকভাবে ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদান এবং পাঁচ বছর পর পর ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করা হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পর আপনার সংস্থার মাধ্যমে ভবন ভাঙার ব্যবস্থা নিলে জানমালের ক্ষতি হবে না। তাই ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা ২০০৮-এর ২৯ ধারামতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার ব্যবস্থা নিতে আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
ভবন ভাঙার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ভবন মালিককে ভবন ভাঙার নির্দেশনা দিয়ে ২০১৪ সালের ২ জুন রাজউক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। মালিককে নিজ উদ্যোগে ভবন অপসারণ বা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলে ভবন মালিকের ওপর দায় বর্তাবে।
তবে রাজউকের নির্দেশনার পরও কোনো মালিক ভবন ভাঙার উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে রাজউক চিঠি পাঠায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না রাজউক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের পরিচালক (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. গোলাম মোস্তফা বণিক বার্তাকে জানান, নিয়মানুযায়ী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ভবন বা স্থাপনার ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার এখতিয়ার আইনত সিটি করপোরেশনের। ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার জন্য একটি তালিকা রাজউক থেকে সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়েছিল। সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা মেলেনি। মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেবে, রাজউক সে অনুযায়ী এসব ভবনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে গত এপ্রিলে নেপালে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে বিশেষ রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড লাগাতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে রাজউক ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দেয়া হলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই।
Leave a Reply