রাজউকের তত্ত্বাবধানে ফ্ল্যাট নির্মাণ আস্থার সংকটে রিহ্যাব
জেসমিন মলি | ২০১৪-১২-১৩ ইং
ফ্ল্যাট কিনে গ্রাহকদের হয়রানির শিকার ও প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ পুরনো। সময়মতো প্রকল্প শেষ না হওয়া, চুক্তির অতিরিক্ত অর্থ দাবিসহ বিভিন্ন কারণে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। আস্থা সংকটের ফলেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নতুন ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পাচ্ছেন না রিহ্যাব সদস্যরা। বিদেশী প্রতিষ্ঠানকেই দেয়া হচ্ছে এসব প্রকল্পের কাজ।
এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, রাজউক এখন থেকে জমি বা প্লট বিক্রির পরিবর্তে ফ্ল্যাট বিক্রি করবে। এজন্য কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। ফ্ল্যাট নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে জিটুজি ভিত্তিতে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। গ্রাহকদের ফ্ল্যাট কেনার প্রতারণা ও হয়রানি থেকে রক্ষা করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রিহ্যাবভুক্ত সদস্যদের সঙ্গে অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয় রাজউকের। এর আগে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ১৬ তলার ৪৯টি ভবনের কাজ দেয়া হয় এনা প্রপার্টিজকে। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয়। পরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয় রাজউক। এছাড়া ফ্ল্যাট ক্রয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে মন্ত্রণালয়কে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। এবার এসব জটিলতা এড়াতেই বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া রিহ্যাব সদস্যদের দিয়ে ফ্ল্যাট তৈরি করলে তা সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়ে যায়। এ কারণেই মন্ত্রণালয় রাজউকের তত্ত্বাবধানে ফ্ল্যাট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে রিহ্যাবের সহসভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘রিহ্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগে আমরা একাধিক সদস্যের পদ স্থগিত ও বাতিল করেছি। বিদেশী প্রতিষ্ঠান দিয়ে ফ্ল্যাট তৈরির সরকারি উদ্যোগের ফলে দেশী ব্যবসায়ীরা সংকটে পড়বেন। কর্মহীন হয়ে পড়বেন এ খাতে জড়িত পেশাজীবীরা।
মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে ১২ হাজার ফ্ল্যাটের বহুতল ভবন নির্মাণ করবে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে তারা কামরাঙ্গীরচরে ১০ হাজার ফ্ল্যাটের বহুতল ভবনও নির্মাণ করবে। রাজউক সূত্রে জানা যায়, উত্তরা আবাসিক এলাকার তৃতীয় ফেজে ১৮ নম্বর সেক্টরে মোট ১৮ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বি ও সি ব্লকে ১২ হাজার ফ্ল্যাট মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠান তৈরি করবে। কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দাদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ও আবাসন সমস্যা সবধানে এখানেও বহুতল ভবন নির্মাণ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেয়া হবে।
জানা গেছে, গত ১৬-২০ মে রাজউক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কারিগরি দল মালয়েশিয়া সফর করে। ওই সফরে কারিগরি দলটি ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড বিল্ডিং সিস্টেম পদ্ধতিতে নির্মিত ও নির্মাণাধীন কয়েকটি বহুতল আবাসিক ভবন এবং কমপ্লেক্স পরিদর্শন করা হয়। সফর শেষে কারিগরি দলটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে নির্মাণে প্রচলিত পদ্ধতির মতো কলাম, বিম, ছাদ, দেয়াল, ছায়া-দেয়াল নির্মাণ করা হয় না। এক্ষেত্রে উন্নতমানের অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। এতে তুলনামূলক কম সময়ে গুণগতভাবে উন্নতমানের ইমারত নির্মাণ করা যায়। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে বহুতল আবাসিক ভবনগুলো ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড বিল্ডিং সিস্টেম প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হলে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত হবে, একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়ও কম লাগবে।
Leave a Reply