অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয়
জেসমিন মলি | ২০১৪-১১-২৩ ইং
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপন সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় সময়মতো শুরু করা যায়নি প্রকল্পের কাজ। নতুন সংকট দেখা দিয়েছে ক্যাবল ক্রয় নিয়ে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে সব অর্থ অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ব্যয় করবে সরকার। বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেডকে (বাকেশি) লাভজনক করতে প্রতিষ্ঠানটির অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল প্রকল্পে ব্যবহারের কথা রয়েছে। তবে ক্যাবলের প্রস্তাবিত দরের চেয়ে চলতি বাজারদর বেশি হওয়ায় উপকরণটি ক্রয়ে সংকটে পড়েছে বিটিসিএল।
নাম প্রকাশ না করে বিটিসিএলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার থেকে পর্যাপ্ত বাজেটসহায়তা না পাওয়ায় সময়মতো প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সঠিক মূল্যায়ন না করে ক্যাবলের দর নির্ধারণ করায় এখন নতুন সংকট দেখা দিয়েছে।
সূত্রমতে, বিটিসিএলের এ প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা ছিল ২০১২ সালে। অর্থায়ন সংকটের কারণে তা পিছিয়ে নির্ধারণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন। সে সময়ও প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। নির্ধারিত সময়ে শুরু করতে না পারায় মেয়াদ বাড়ানো হয় প্রকল্পের। বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। কিন্তু অর্থ সংকটের পাশাপাশি ক্যাবল ক্রয়সংক্রান্ত জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে এ প্রকল্পকাজের বেশ কয়েকটি দরপত্র আহ্বান করা হলেও ক্যাবলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেনি বিটিসিএল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান বাজারদর হিসাব করে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধনের পর যদি আবারো মূল্য বাড়ে, তখন নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ বিষয়ে পরিকল্পনা উইংয়ের স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং বিটিসিএলের চেয়ারম্যান ফয়জুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে পরিকল্পনা উইংয়ের স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পের কাজ।
বিটিসিএল সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৯৮ উপজেলা থেকে এসব ইউনিয়নে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন করা হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করতে এ প্রকল্প নেয়া হয়। সারা দেশে আধুনিক শক্তিশালী ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণের অংশ হিসেবে এ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি ই-তথ্যকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সব ইউনিয়নকে ক্যাবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে ২০১০ সালের ২২ মার্চ ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপনের জন্য বিটিসিএলকে নির্দেশনা দেয় সরকার। এ অবস্থায় বিটিসিএল ইউনিয়ন পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
বিটিসিএলের উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন শীর্ষক অন্য প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বা উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা দেয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, দেশের একটি বড় অংশে কোনো অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ নেই। এজন্য ৬৪ জেলার ২৯০ উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হবে। টার্মিনাল ইকুইপমেন্ট ও ৭০ জেনারেটর ক্রয় করা হবে। এজন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬১ কোটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২২৫ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৯৬ কোটি ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হিসাব করা হয়েছে।
Leave a Reply