সরকারি ভবনে বাধ্যতামূলক হচ্ছে সবুজ প্রযুক্তি

জেসমিন মলি | ২০১৪-১১-১৯ ইং

ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদার ওপর চাপ কমাতে সরকারি ভবন নির্মাণে গ্রিন টেকনোলজি বা সবুজ প্রযুক্তি বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এতে প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাস-বিদ্যুত্সহ বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি পানির ব্যবহারও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা।

বেসরকারি খাতে ভবন নির্মাণে গ্রিন টেকনোলজির ব্যবহার হলেও সরকারি ভবন নির্মাণে এ ধরনের উদ্যোগ এবারই প্রথম। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ গ্রিন বিল্ডিং প্রযুক্তি প্রসারের এ উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রযুক্তি প্রসারে সারা দেশে সেমিনারের আয়োজন করেছে এপলম্বটেক বিডি নামে সরকারের নিবন্ধিত একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্প চলবে।www.bonikbarta.com

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বণিক বার্তাকে জানান, মূলত জ্বালানির ওপর চাপ কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলইডি বাতির ব্যবহার ও সূর্যের আলোর ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পানির ব্যবহার কমিয়ে আনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপরও জোর দেয়া হবে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সবুজ প্রযুক্তির ভবনের নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ প্রক্রিয়া সবই সাধারণ ভবনের চেয়ে আলাদা। এজন্য এ প্রযুক্তির ভবনের নির্মাণ খরচ একটু বেশি। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক কম হবে। এ ধরনের প্রযুক্তি বাংলাদেশে নতুন হলেও সরকার পরিবেশের কথা বিবেচনা করে এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে এপলম্বটেক বিডির প্রযুক্তি ও বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক রাহবী আলভী জানান, সবুজ প্রযুক্তি প্রসারের মাধ্যমে বিদ্যুত্সহ অন্যান্য জ্বালানির সাশ্রয় করা সম্ভব। সাশ্রয়কৃত জ্বালানি বিদ্যুিবহীন এলাকা আলোকিত করার কাজে ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুতের অপচয়ের পাশাপাশি নিশ্চিত করা যাবে ঘরবাড়ি ও অফিস-আদালতের নিরাপত্তা। যে কোনো স্মার্টফোনে শুধু একটি এপ্লিকেশন ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অফিস ও ঘরবাড়ির সব ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরের বাইরে থেকে, এমনকি পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকেও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ ও উন্নত হবে।

প্রতিষ্ঠানটি সূত্রে জানা গেছে, এ পদ্ধতির আওতায় অটোমেটিক কন্ট্রোলিং ডিভাইসের মাধ্যমে ঘর বা অফিসের ইলেকট্রনিকসামগ্রী বন্ধ ও চালু করা যাবে। এর কন্ট্রোল রিডিং সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতের অপচয় রোধ এবং অটোমেটিক লাইটিং সিস্টেমের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক আলোর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কন্ট্রোল অব লাইটিং ইনটেনসিটি সিস্টেমের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক বাতির আলো কমানো বাড়ানো যাবে। এছাড়া কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে ও কোন বৈদ্যুতিক ডিভাইস কী পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে তাও জানা যাবে। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহার অনেক সাশ্রয়ী হবে।

ভবন নির্মাণে জড়িত প্রকৌশলী ও স্থপতিরা জানান, সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার করে নির্মিত ভবনে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উত্পাদনের সুযোগও বাড়ানো হবে। এ ধরনের ভবনে এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার না করে  এলইডি লাইট ব্যবহার করা হবে, যা কক্ষে কেউ প্রবেশ করা মাত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠবে আবার কক্ষ ত্যাগ করা মাত্র বন্ধ হয়ে যাবে। লিফটের নিজস্ব বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা থাকবে। যার মাধ্যমে লিফটের ভেতরের বিদ্যুতের চাহিদা সে নিজেই পূরণ করতে পারবে। ভবনের ছাদে থাকবে পানির রিজারভার। যার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা হবে। সেই সঙ্গে বেসিনে ব্যবহূত পানি কমোডের ফ্লাশে ব্যবহারের জন্য ধারণ করে রাখার ব্যবস্থা থাকবে। এভাবে পানির ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দেয়া হয়। এছাড়া দিনের আলো ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হবে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করতেও বিভিন্ন প্রযুক্তি নেয়া হবে। তারা আশা করছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশে সবুজ আবাসন শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

Leave a Reply