বিটিসিএলে দুর্নীতি মামলা নিষ্পত্তির আগেই আসামির পদোন্নতি
জেসমিন মলি | ২০১৪-০৩-১৯ ইং
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যেই আসামির পদোন্নতি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। বিচার শেষ হওয়ার আগেই আসামির এ পদোন্নতি দুর্নীতিকে উত্সাহিত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে গত বছর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। কিন্তু ছয় মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি ওই কমিটি। জড়িতদের বিরুদ্ধে তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া যায়নি। তাদের অনেকেই স্বপদে বহাল রয়েছেন। কাউকে কাউকে আবার পদোন্নতিও দেয়া হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্তদের বিচার শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদোন্নতি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দুর্নীতিবাজরা এতে প্রশ্রয় পাবে। অভিযুক্তদের অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে সামাজিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
কলডাটা মুছে ফেলে ৬০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বিটিসিএলের বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক এর প্রমাণও পায়। পরে বিটিসিএলের সাবেক ও বর্তমান পাঁচ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত বছর চারটি মামলা করে কমিশন। তিনটি মামলায় আসামি করা হয় বিটিসিএলের সাবেক সদস্য (রক্ষণাবেক্ষণ ও চলাচল) প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌফিককে। মামলা নিষ্পত্তির আগেই এ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে গাজীপুরের টেলিকমিউনিকেশন্স স্টাফ কলেজের ডিজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া টেলিযোগাযোগ ভবনের পরিচালক (সংস্থাপন ও প্রশাসন-১) সাহাব উদ্দিনকে পদোন্নতি দিয়ে ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের (পশ্চিম) পরিচালক করা হয়েছে। ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের (পশ্চিম) পরিচালক (ফোনস) মো. শাহাজাহানকে টেলিযোগাযোগ ভবনের পরিচালকের (সংস্থাপন ও প্রশাসন-১) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মহাখালী ট্রান্সমিশন অঞ্চলের পরিচালক-২ তাসকিনুর রহমানকে পরিচালক-১ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। সরকার মো. জাবেদ রব্বানীকে মহাখালী ট্রান্সমিশন অঞ্চলের পরিচালক-১ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মহাখালী ট্রান্সমিশন অঞ্চলের পরিচালক-১ রফিকুল ইসলামকে টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের (পূর্ব) পরিচালক হিসেবে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অন্য এক প্রজ্ঞাপনের আরো সাত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় বিটিসিএল। এর মধ্যে মাহফুজ উদ্দিন আহমদকে সদস্য (অর্থ) থেকে সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খগেন্দ্র কুমার রায়কে সদস্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শাহনেওয়াজকে সদস্য (অর্থ) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের (উত্তর) প্রধান কর্মাধ্যক্ষ স্বপন কুমার সাহাকে ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন প্রকল্পে প্রধান কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ ভবনের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ কবির হোসেন ভুঞাকে ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চল (কেন্দ্রীয়) নীলক্ষেতের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ করা হয়েছে। ঢাকা শহরের পুরনো ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ প্রতিস্থাপন প্রকল্পের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ আমিনুল হাসানকে ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চলের (উত্তর) প্রধান কর্মাধ্যক্ষ করা হয়েছে। ঢাকা টেলিযোগাযোগ অঞ্চল (কেন্দ্রীয়) নীলক্ষেতের প্রধান কর্মাধ্যক্ষ মো. মাইনুদ্দিনকে দেয়া হয়েছে এক হাজার ইউনিয়নের অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব। যদিও দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মকর্তার অনেকের নামই তদন্তে উঠে এসেছে। কমিশনে ডেকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এর মধ্যে কারো কারো নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দুদকের মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply