জমির মালিকানা নিয়ে স্বদেশ-আশিয়ান বিরোধ
জেসমিন মলি
রাজধানীর খিলক্ষেতে ২২ বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে স্বদেশ প্রপার্টিজ ও আশিয়ানের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ওই জমি দখলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে কোম্পানি দুটির আইনি লড়াই হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। খিলক্ষেত থানার বরুয়া মৌজার এ জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এখন স্বদেশের আরো ১০০ বিঘা জমি ক্রোকবদ্ধ করতে আদালতে আবেদন করেছে আশিয়ান। বিরোধপূর্ণ জমিতে আশিয়ানের প্রতিষ্ঠিত একটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যে কলেজের নীতিগত অনুমোদন ও একাডেমিক অনুমোদন স্থগিত করেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে সম্প্রতি স্বদেশ প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন আশিয়ান ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নজরুল ইসলাম। জমি আত্মসাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আশিয়ানের বিরুদ্ধে স্বদেশ পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিলে তাতে আশিয়ানের এমডির ‘ব্যক্তিগত মান ও ব্যবসায়িক সুনাম’ হানি হয়েছে বলে দাবি করা হয় মামলায়।
এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি ও মামলার কাগজপত্রে দেখা যায়, স্বদেশ প্রপার্টিজ দাবি করছে, খিলক্ষেত থানার বরুয়া মৌজায় ১০২২ থেকে ১০৩২ পর্যন্ত দাগের মোট ২২ দশমিক শূন্য ৭ বিঘা (৭ দশমিক ২৮৫ একর) জমির মালিক তারা। ওই জমিতে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করছে আশিয়ান। গত ৩ এপ্রিল বিভিন্ন পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে স্বদেশ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী দাবি করেন, এসব দাগের মধ্যে আশিয়ান অল্প পরিমাণ জমি কিনে পুরো ২২ বিঘারই মালিকানা দাবি করছে। এছাড়া স্বদেশের মালিকানাধীন জমিতে হাসপাতাল বানানো এবং সংলগ্ন অন্যান্য ব্যক্তির জমি দখলেরও অভিযোগ আনা হয় আশিয়ানের বিরুদ্ধে। এসব জমি উদ্ধার চেয়ে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এ বছর একটি মামলাও করেছে কোম্পানিটি। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন।
এ মামলা ও সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি মিথ্যা দাবি করে গত মাসে হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন আশিয়ানের এমডি। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দায়েরকৃত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মানহানি মামলায় পরাজয় হবে বুঝতে পেরে হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ এড়াতে স্বদেশ চেয়ারম্যান বরুয়া মৌজায় তার মালিকানায় থাকা কমবেশি ১০০ বিঘা জমি অন্য নামে হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। ফলে স্বদেশের মালিকানায় থাকা মৌজাটির ৮৩৯ থেকে ৮৪৭, ৮৫৪ থেকে ৮৭৮, ৮৮১ থেকে ৮৮২, ৮৮৪ থেকে ৮৯০, ৮৯২ থেকে ৮৯৮ ও ১১২৬ থেকে ১১২৯ পর্যন্ত মোট ৫৪ দাগের কমবেশি ১০০ বিঘা জমি ক্রোকবদ্ধ করে রাখার আবেদন করেন নজরুল ইসলাম। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশ চেয়ারম্যানকে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে আদালত জমি ক্রোকবদ্ধ করার বিপক্ষে কারণ দেখাতে বলেছেন।
এ বিষয়ে স্বদেশ প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী বণিক বার্তাকে বললেন, যে জমি দখল করে আশিয়ান হাসপাতাল করেছে, তার পুরোটাই ক্রয়সূত্রে মালিক স্বদেশ। আর এখন মানহানি মামলা করে পুরো ১০০ বিঘা জমিই ক্রোকবদ্ধ করতে বলছে আশিয়ান। এ ব্যাপারে আশিয়ানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার একান্ত সচিব ‘স্যার ব্যস্ত আছেন’ বলে এড়িয়ে যান।
এর আগে আশিয়ান মেডিকেল কলেজকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া নীতিগত অনুমোদন ও একাডেমিক অনুমোদন স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে কলেজটির নির্মাণ বন্ধ রাখতে অধ্যক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
আদালতের তথ্যে দেখা যায়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) লঙ্ঘন করে এ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নীতি অনুসারে, সর্বনিম্ন ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর আসনবিশিষ্ট বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য মহানগর এলাকায় কলেজের নামে কমপক্ষে দুই একর জমি অথবা নিজস্ব জমিতে একাডেমিক ভবনের জন্য এক লাখ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে। তবে আশিয়ান মেডিকেল কলেজের এ পরিমাণ জমি নেই। কলেজের অনুমোদন নেয়ার সময় মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন কমিটির প্রতিবেদনে নয়তলা ভবনে দুই লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেসে একাডেমিক কার্যক্রমের বিভিন্ন বিভাগ সাজানো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। যদিও বাস্তবে কলেজটির কোনো নয়তলা ভবন নেই।
দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত
Leave a Reply