চেয়ারম্যান-কমিশনার দ্বন্দ্বে বিঘ্নিত দুদকের কার্যক্রম
জেসমিন মলি
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধানের পদ নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ও এক কমিশনারের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে দুদকের দৈনন্দিন কার্যক্রম। ঝুলে থাকছে কমিশনের অনেক সিদ্ধান্ত।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, দুদকের একজন কমিশনার চেয়ারম্যান পদ পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন মাস ধরে তিনি এজন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগও করেছেন। চেয়ারম্যান পদ পেতে একজন কমিশনারের অতি আগ্রহের কারণেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের স্বপদে বহাল থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বুধবার আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম রহমানের মেয়াদ গত ১ মে শেষ হয়েছে দাবি করে নোটিস পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে পদ ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হয় নোটিসে।
এছাড়া অবৈধ ভিওআইপির অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুমোদন ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি দমনে দল পুনর্গঠন নিয়েও চেয়ারম্যান ও কমিশনারের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদক কর্মকর্তাদের দাবি, গত ২৫ মে গুলশানের একটি ভবনমালিকের বিরুদ্ধে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও দুদকের যৌথ কমিটি ব্যবস্থা নেয়। তবে ওই ভবনমালিকের সঙ্গে দুদকের এক পরিচালকের সখ্য থাকায় গত ২৮ মে তাকে দল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে ওই পরিচালকের অনুরোধে দুদকের একজন কমিশনার রাজউকের প্রাতিষ্ঠানিক দলে পরিবর্তন আনেন। কমিশনের এক বৈঠকে দুদক চেয়ারম্যান এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে জানান বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা।
এছাড়া অবৈধ ভিওআইপি অনুসন্ধানে গঠিত দল এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে কমিশনে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) দুই সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সাত কর্মকর্তা ও বিদেশী টেলিকম প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার সুপারিশ অনুমোদন হয়নি।
এ ঘটনার সঙ্গে দুদকের একজন কমিশনার ও পরিচালক সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। তারা বিটিসিএলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ মামলা থেকে বাদ দিতে জোর সুপারিশ চালাচ্ছেন। এ কারণেই কমিশন মামলা অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে কালক্ষেপণ করছে। আর এ সুযোগে অভিযুক্ত অনেক বিটিসিএল কর্মকর্তা বিদেশে চলে যাচ্ছেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বিরোধের জেরে সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যানের হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সফরের সময় কমিশনার বেশকিছু অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদন বাতিল করে দেন। এতেও দুদক চেয়ারম্যান অসন্তোষ জানালে কমিশনাররা ফাইলে সই করা বন্ধ রাখেন। তিন সপ্তাহ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
যোগাযোগ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলব।’
দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত
Leave a Reply