চালু প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ণ ঘোষণা জনতা ব্যাংকের ক্ষতি ১২ কোটি
জেসমিন মলি
চালু প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ণ দেখিয়ে ঋণ মওকুফ করায় ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা ক্ষতিতে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। আর সুবিধাটি পেয়েছে মুশনা ওয়্যার প্রোডাক্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুশনা ওয়্যার জনতা ব্যাংক ভবন করপোরেট শাখার গ্রাহক। তাদের চলতি হিসাব নং ০০১০১৬১২১। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সুপারিশে ২৮ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির জমিসহ বাড়ি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়। কিন্তু চালু ও লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি রুগণ উল্লেখ করে ঋণ মওকুফের জন্য প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনটি যাচাই-বাছাই ছাড়াই শাখা ব্যবস্থাপক ঋণ মওকুফের সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশের ভিত্তিতেই মুশনা ওয়্যারের ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা মওকুফ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে জনতা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আমিনুর রহমান এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। ব্যাংকের ডিজিএম আজমল হক জানান, রুগণ প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মুশনা ওয়্যারের ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধানের জন্য বেশকিছু নথি আমরা দুদকে সরবরাহ করেছি।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় মুশনা ওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমানকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কারখানা বিক্রির আগে হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদকে তিনি চিনতেন না বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ঋণ মওকুফের পর প্রতিষ্ঠানটি হল-মার্ক গ্রুপের মালিকের কাছে ৩৫ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের পাওনা ছিল ২৮ কোটি টাকা। একই সঙ্গে জনতা ব্যাংকের ১২ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ মওকুফের আগে হল-মার্ক, সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক ও প্রতিষ্ঠানটির মালিকের মধ্যে অবৈধ লেনদেন হয়। এর পরই প্রতিষ্ঠানটিকে রুগণ ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক (হিসাব) আসাদুজ্জামান জানান, অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দেয়ার কথাবার্তা চলছিল। পরে হল-মার্ক গ্রুপের কাছে এটি বিক্রি করে দেয়া হয়। তবে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় এখনো মাহবুবুর রহমানই প্রতিষ্ঠানটি দেখভাল করছেন। বিক্রি হওয়ার আগে প্রায় দেড় বছর কারখানাটি বন্ধ ছিল বলে দাবি করেন আসাদুজ্জামান।
বন্ধের কারণ হিসেবে এ কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে কারখানার কয়েকজন শ্রমিক মারা যান। এরপর আর কেউ কাজ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রাখতে হয়েছে।
মুশনা ওয়্যার প্রোডাক্টের ফ্যাক্টরি সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়ায়। প্রতিষ্ঠানটিতে গ্যালভানাইজিং ওয়্যার তৈরি করা হয়।
দৈনিক বণিক বার্তায় প্রকাশিত
Leave a Reply